কালী সাধনা – সাধক রামপ্রসাদ

16

কালী সাধনা – সাধক রামপ্রসাদ

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বাংলার কালী সাধক দের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র সাধক রামপ্রসাদ যিনি একাধারে ছিলেন সাধক এবং শিল্পী। তার সাধন মার্গ ছিলো নানা দিক থেকে ব্যাতিক্রমী। আজ এই মহান সাধকের মাতৃ সাধনা নিয়ে লিখবো।

যদিও তার জন্মতিথি নিয়ে কিছু মত পার্থক্য আছে তবে ধরে নেয়া হয় ১৭২৩ সালে ২৪ পরগণার কুমারহট্টে অর্থাৎ আজকের হালিশহরে রামপ্রসাদের জন্ম। পিতা রামরাম সেন ছিলেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। তিনি চেয়েছিলেন ছেলে চিকিৎসক হোক। কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই রামপ্রসাদকে আকর্ষণ করত আধ্যাত্মিক জগৎ দিন রাত ভাব তন্ময় হয়ে কালী চেতনায় ডুবে থাকতেন রামপ্রসাদ। সংসারে তার মন বসতো না। বিষয় আসয় নিয়ে ভাবার তার সময় নেই ইচ্ছেও নেই।একটু বড় হয়ে গান গাইতে, গান লিখতে এবং গানে সুর করার অদ্ভুত প্রতিভা ছিলো তার। স্বরচিত কালী কীর্তন এবং শ্যামা সংগীত ছিলো তার সাধনার মাধ্যম।

বাড়ির ইচ্ছেতে বিবাহ করলেও সেই অর্থে সংসারী হওয়া হয়নি রামপ্রসাদের। পরবর্তীতে তান্ত্রিক যোগী কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তিনি রামপ্রসাদকে তন্ত্রসাধনা ও কালীপুজো পদ্ধতির শিক্ষা দিয়েছিলেন আগমবাগীশ। তবে তন্ত্র মন্ত্রের চেয়ে গানই তাকে বেশি টানতো। কিছুদিন কলকাতায় দুর্গাচরণ মিত্রের কাছারিতে হিসেবে রক্ষকের কাজ করেন রামপ্রসাদ। তবে খুব অল্প দিনেই হালিশহরে ফিরে পঞ্চবটীর আসনে শুরু করলেন মায়ের আরাধনা।

নিজের হাতে ছোট্ট এক ছাউনি তে মাতৃ প্রতিমা গড়ে মায়ের ধ্যান, পূজা, হোম, যজ্ঞ নিয়ে তার দিন কাটতো । মায়ের নাম জপ করতেন অষ্টপ্রহর। এরই ফাঁকে মাকে শোনাতেন স্বরচিত শ্যামাসঙ্গীত। গান গাইতে গাইতে চোখ দিয়ে নেমে আসতো অশ্রু।রামপ্রসাদ রচিত শ্যামাসংগীতে মা কালী ভয়ংকর ও উগ্ররূপিণী দেবী নন। কখনও তিনি মা, কখনও মেয়ে।তার কালী সাধনা ছিলো সহজ সরল এবং আবেগ সর্বস্ব। এই সাধনাতেই তুষ্ট হয়ে মা কালী রামপ্রসাদকে দর্শন দিয়ে ছিলেন।

শোনা যায়, তিনি একবার বাড়িতে নিজে হাতে বেড়া বাঁধছিলেন। সেই সময় কাছেই তাঁর মেয়ে খেলা করছিল। মেয়ের থেকে দড়ি চেয়েছিলেন রামপ্রসাদ। মেয়ে খেলার আনন্দে সেই ডাককে গুরুত্ব দেয়নি। সেই সময়ে দেবী নিজে তাঁর মেয়ের রূপ ধরে রামপ্রসাদের হাতে বেড়ার দড়ি তুলে দিয়েছিলেন। পরে আসল সত্য উপলব্ধি করেছিলেন রামপ্রসাদ। বুঝে ছিলেন তার কালী সাধনা স্বার্থক হয়েছে। তিনি মা কালীর দেখা পেয়েছেন। কন্যা রূপে মা তাকে দেখা দেন।

আবার পরের পর্বে অন্য এক কালী সাধকের জীবন এবং তার সাধনার কথা নিয়ে
ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।