কালী কথা – সিয়ারশোল রাজবাড়ির পুজো

12

কালী কথা – সিয়ারশোল রাজবাড়ির পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সিয়ারসোল রাজবাড়ি কালী পুজো রানী গঞ্জের অন্যতম পুরোনো এবং বিখ্যাত পুজো। এই পুজোর বয়স প্রায় তিনশো বছর এবং পুজো শুরু হয়ে ছিলো একটি বিশেষ কারণে। আজ কালী কথায় এই পুজো নিয়ে লিখবো।

 

এই পুজোর ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায় এক সময় গ্রামে দেখা গেছিল মহামারী কলেরার প্রকোপ। একের পর এক গ্রাম উজাড় হয়ে চলেছে কলেরার প্রকোপে।সেই সময়

এই রোগের ওষুধ পাওয়া ছিলো প্রায় অসাধ্য।

 

সেই সময়কালেই গ্রামকে রক্ষার লক্ষ্যে গ্রামের প্রবীণ সদস্যরা চিন্তা করলেন গ্রামে দেবী আরাধনার মাধ্যমে গ্রাম্য দেবীর পুজোর আয়োজন করবেন তারা। সে মতোই তৎকালীন সময়ে গ্রামের পুরোহিত এবং মাতৃ সাধক অনন্ত লাল ভট্টাচার্যকে মা রক্ষা কালী পুজোর জন্য আবেদন জানান সকলে।

 

সব দিক বিচার করে ভট্টাচার্য মশাই দিনক্ষণ তিথি নক্ষত্র ধরে বৈশাখ মাসের এক অমাবস্যা তিথিতে শাক্ত মতে মা রক্ষা কালীর পুজোর আয়োজন করলেন। পরে মা কালীর স্বপ্নাদেশে নির্দেশ দেন তার মন্দির যেন কখনোই আবৃত না থাকে অর্থাৎ খোলা আকাশের নিচেই যেন তার পুজো করা হয়। সে মতোই গ্রামের শেষ প্রান্তে তেঁতুল গাছের নিচেই পূজিত হন মা রক্ষা কালী।

 

এখানের কালীপুজোর বিশেষত্ব হচ্ছে রক্ষা কালীর মূর্তি একই দিনে গড়ে তোলার পর রাতভর পুজো হোম যজ্ঞ, তন্ত্র মতে বলিদান কর্মসূচির মাধ্যমে সমস্ত উপাচার সম্পন্ন হয়। তারপরে রাতে

ভক্ত দের মধ্যে ভোগ বিতরণ হয় এবং সকালের সূর্য উদয় হওয়ার আগেই প্রীতিমা নিরঞ্জন হয়।

 

শোনা যায় এই রক্ষা কালী শুধু মহামারী থেকে যে গ্রামবাসিদের বাঁচিয়েছে তা নয় তার পুজো যেদিন

থেকে শুরু হয়েছে সেদিন থেকে এলাকার মানুষের জীবন যাত্রা উন্নত হয়েছে। ফসল বেশি ফলেছে। সুখ সমৃদ্ধি এবং শান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

তিনশো বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম সব দেবীর নিয়ম নিষ্ঠা অক্ষুন্ন রেখে দেবীর পুজো দিয়ে আসছেন এবং বংশ পরম্পরায় আজও সেই ভট্টাচার্য পরিবারের হাতেই রয়েছে পুজোর দায়িত্ব।

 

আবার কালী কথার পরবর্তী পর্বনিয়ে ফিরে আসবো যথা সময়ে তবে সামনেই অম্বুবাচি এবং প্রভু জগন্নাথের স্নান যাত্রা তাই এই দুটি বিষয় নিয়ে আগামী সপ্তাহে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা

চলবে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।