কালী কথা – গগণ পুরের ক্ষ্যাপা কালীর পুজো

54
  1. কালী কথা – গগণ পুরের ক্ষ্যাপা কালীর পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বর্ধমানের মঙ্গলকোটে রয়েছে জাগ্রত ক্ষ্যাপা কালীর থান। এই কালী পুজোকে কেন্দ্র করে একটি অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। আজকের পর্বে জানাবো সেই অলৌকিক ঘটনা এবং এই কালী পুজোর ইতিহাস।

 

প্রচলিত লোক কাহিনী অনুসারে একবার

গণপুরের ভট্টাচার্য বাড়ির প্রবীণ সদস্য নিমাই ভট্টাচার্য নিজেদের পৈত্রিক পুকুর কালীসায়ের থেকে স্নান করে বাড়ি ফিরছিলেন । হঠাৎ দেখতে পেলেন তার পিছনে পিছনে একটা এলোচুলের কালো কিশোরী মেয়ে আসছে। বাড়ির কাছেই সাঁওতাল পাড়া তাই তিনি ভাবলেন কোনো সাঁওতাল মেয়ে হবে।কিন্তু যে মুহূর্তে বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়েছেন হঠাৎ শুনতে পেলেন – “আমাকে নিয়ে যাবিনা ?” চমকে ওঠেন নিমাই বাবু পিছনে তাকিয়ে সেই কিশোরী মেয়েটিকে আর দেখতে পাননি।

 

সেই রাতেই ধার্মিক নিমাই ভট্টাচার্য স্বপ্নে মা কালী কে দেখেন এবং মা কালী তাকে তার পুজো শুরু করার নির্দেশ দেন।মা’কালীর নির্দেশে শুরু হয় কালী পুজো।

 

সেই এলোচুলের মেয়েটিকে ক্ষেপির মত দেখতে লাগছিল তাই মায়ের নাম রাখা হয় ক্ষ্যাপাকালী। যেহেতু তার গায়ের রঙ ছিল কালো তাই মায়ের গায়ের রঙ করা হয় কালো ।স্বপ্নে পাওয়া মায়ের নির্দেশ অনুযায়ী কালীসায়েরের একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে গভীর রাতে পাটকাঠি জ্বালিয়ে মায়ের ঘট আনা হয় । আজও সেই রীতি চলে আসছে।বিশেষ ওই স্থানে নাকি স্বয়ং মহাদেব বিরাজ করেন এমনটাই বিশ্বাস করেন গগণ

পুরের মানুষ।

 

প্রথম দিকে তালপাতার ছাউনি দেওয়া ঘরে মায়ের পুজো হতো। মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে গ্রামের এক বাসিন্দা নিদিষ্ট একটি জায়গা দান করেন। পরবর্তীতে সেখানেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী মন্দির। এখনো আছে পঞ্চমুণ্ডীর আসন ।

 

প্রতিটি বিশেষ অমাবস্যা তিথিতে বিশেষ পুজোর আয়োজন হয় এবং বহু ভক্ত সমাগম হয়।

ভক্তরা বলেন এখনো মায়ের ভোগের থালায় দেখা যায় হাতের দাগ দাগ। দেখলে মনে হবে কেউ যেন সেখান থেকে খাবার তুলে খেয়েছে। মনে করা হয় সবার অলক্ষ্যে স্বয়ং ‘মা’ এসে ভোগ খেয়ে গেছেন

এই অঞ্চলের যেকোনো শুভ কাজে ক্ষ্যাপা পায়ের আশীর্বাদ নেয়ার রীতি আছে।শুভ কাজে

যাওয়ার অনেকেই ক্ষ্যাপা কালীর পূজায় ব্যাবহিত

ফুল নিজের সঙ্গে রাখেন।

 

বাংলার এমন সব প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে চলতে থাকবে কালী কথা। যথা সময়ে ফিরে আসবো পরবর্তী পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।