বিদ্যা সুন্দর কালী মন্দিরের ইতিহাস

314

বাংলার ইতিহাসের সাথে সমাজ জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত আছে অসংখ্য কালী মন্দির এবং দেবী কালী সংক্রান্ত নানা পৌরাণিক ঘটনাবলী|কালী কথায় বা বাংলার কালীতে আগেও এই নিয়ে আলোচনা করেছি|আসন্ন দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে আবার শুরু করছি দেবী কালী নিয়ে লেখা থাকবে দেবীরআধ্যাত্মিক মহিমা ও কিছু কালী মন্দিরের কথা|আজ লিখবো বর্ধমানের প্রসিদ্ধ এবং প্রাচীন বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে|বর্ধমানের বিদ্যাসুন্দর কালীপুজোর পেছনে জড়িয়ে রয়েছে এক অলৌকিক ঘটনা|বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদের কন্যা বিদ্যা ও মন্দিরের পুজারি সুন্দর এই ঘটনার প্রধান দুই চরিত্র|তখন বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদের আমল । রাজার এক কন্যা ছিল, নাম বিদ্যা ৷ আর রাজবাড়ির পুজারি ছিলেন সুন্দর নামে এক যুবক। সুন্দরের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভাল ছিল না । রাজবাড়িতে ফুল দিতে আসত মালিনী মাসি নামে জনৈক ভদ্র মহিলা|তিনি প্রতি ঠাকুর বাড়িতে ফুলের মালা দিতেন। যথারীতি একদিন মালিনী মাসি মন্দিরে ফুলের মালা নিয়ে এসেছেন । সেই মালা দেখে পুজারি সুন্দর খুব আকৃষ্ট হন । তিনি মালিনী মাসিকে জিজ্ঞাসা করেন, এত সুন্দর ফুলের মালা কে গেঁথেছে ? যে মালা গেঁথেছে তাকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকে সুন্দর । মালিনী মাসি তাকে বলে, রাজকুমারী বিদ্যা মালা গেঁথেছে কিন্তু তাকে দেখা সম্ভব নয় ।পরবর্তীকালে বিদ্যার সঙ্গে সুন্দরের পরিচয় হয় । তাদের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । এমনকী তারা নাকি মন্দিরের পাশ থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত একটা সুড়ঙ্গ বানিয়ে তার ভিতর দিয়ে বিদ্যা ও সুন্দর একে-অপরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে যেত । একদিন চরের মাধ্যমে তেজচাঁদ বিদ্যা ও সুন্দরের প্রণয়ের ব্যাপারে জেনে ফেলেন । খবরটা কানে যেতেই রাজা প্রচণ্ড রেগে যান । তিনি বিদ্যা এবং সুন্দরকে কালীর সামনে বলি দেওয়ার আদেশ দেন ৷সেই সময়ে বর্ধমানের বেশিরভাগ এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ভর্তি । বিশেষ করে দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ এলাকায় ছিল আরও গভীর জঙ্গল । সেখানেই কালী মন্দিরে পুজো হতো । ওই কালী মন্দিরে কেউ সচরাচর যেতেন না । কথিত আছে, যারা অন্যায় অত্যাচার করত, তাদের এই মন্দিরে দেবীর সামনে হাঁড়িকাঠে নরবলি দেওয়া হত । তাই সেই সময় এই কালী দক্ষিণ মশান কালী নামে পরিচিত ছিল । ফলে দিনের বেলাতেও ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করার কেউ খুব একটা সাহস করত না ।রাজার হুকুম মতো তাদেরকে বলি দিতে নিয়ে যাওয়া হয় সেই মন্দিরে|বলি দেওয়ার আগের মুহূর্তে বিদ্যা ও সুন্দর সেই মন্দিরের কাপালিকের কাছে অনুরোধ জানায়, মৃত্যুর আগে তারা দেবীকে প্রণাম করে আসতে চায় । কাপালিক সেই অনুমতি দেন । প্রণাম করতে যাওয়ার সময় কাপালিক অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান । তারপরেই বিদ্যা ও সুন্দর নাকি কোথায় যেন মিলিয়ে যায় । এরপর থেকে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি । সেই সময় থেকেই মন্দিরের নামকরণ হয় বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির । তার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় নরবলিও ।এখানে দেবীর মন্দির ছাড়াও দুটো শিব মন্দির আছে, যা ভৈরব ও পঞ্চানন্দ নামে পরিচিত । নরবলি বন্ধের পরে মন্দিরে মেষ বলি ও পরে ভেড়া বলি দেওয়া হত । এখন ছাগল বলি দেওয়া হয় ।প্রাচীন সেই সুড়ঙ্গ নাকি ছিলো তবে সেই সুড়ঙ্গ আর এখন নেই তা বুজিয়ে ফেলা হয়েছে ।প্রচলিত এই প্রাচীন অলৌকিক ঘটনা আজও মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়|বহু দুর থেকে মানুষ আসেন এই মন্দিরে দেবীকালীর দর্শন করতে|আগামী 24 নভেম্বর দীপান্বিতা অমাবস্যায় আমার তারাপীঠ মহা শ্মশানে হবে হোম যজ্ঞ ও তন্ত্র মতে গ্রহের প্রতিকার প্রদান|তারা পীঠে আমি নিজে উপস্থিত থাকবো|পাশাপাশি আপনাদের হৃদয়েস্বরী সর্ব মঙ্গলা মায়ের মন্দিরেও হবে গ্রহ দোষ খণ্ডন অনুষ্ঠান কারন আপনারা হয়তো জানেন শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খন্ডনের অন্যতম শ্রেষ্ট তিথি দীপান্বিতা অমাবস্যা আবার একবছর পরে আসবে এই সুযোগ তাই আপনারা চাইলে এই মহা যজ্ঞে অংশ নিতে পারে ও গ্রহগত যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন|ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে কালী তত্ত্ব ও বিভিন্ন কালী মন্দির নিয়ে আলোচনা|ফিরে আসবো আগামী পর্বে কালী কথা নিয়ে|থাকবে অন্য কোনো প্রাচীন মন্দিরের ইতিহাস|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|