জগন্নাথদেবের অসম্পূর্ণ মূর্তির রহস্য

117

জগন্নাথদেবের অসম্পূর্ণ মূর্তির রহস্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরীতে প্রভু জগন্নাথের স্নান যাত্রা প্রায় আসন্ন। স্নান যাত্রার মধ্যে দিয়েই রথ যাত্রার সূচনা হয়ে।

পবিত্র এই সময়ে আবার আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি জগন্নাথ লীলা নিয়ে

ধারাবাহিক আলোচনা। আজ শুরু করবো প্রভু জগন্নাথের অসম্পূর্ণ মূর্তির রহস্য দিয়ে।

 

সাধারণত দেব মূর্তি অসম্পূর্ণ থাকেনা এবং মূর্তি অসম্পূর্ণ হলে তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা বা পুজো হয়না। কিন্তু জগন্নাথ মূর্তি অসম্পূর্ণ এবং এই রূপেই জগতের নাথ নিত্য লীলা করে চলেছেন।

 

জগন্নাথ ভগবান বিষ্ণুরই অন্য রূপ। আবার অনেকের কাছে তিনি সাক্ষাৎ বামন অবতার।

পুরীর রাজা ইন্দ্রদুম্ন ভগবান বিষ্ণুর মন্দির তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিগ্রহের কেমন আকার দেবেন তা নির্ধারণ করতে পারছিলেন না। তখন তিনি এই সমস্যার কথা সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার কাছে জানান। তখন ভগবান ব্রহ্মা ইন্দ্রদুম্নকে বলেন যে, ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান করে তাঁর কাছ থেকে জেনে নিতে যে, তিনি বিগ্রহের কেমন আকৃতি চাইছেন। ব্রহ্মার কথামতো রাজা ইন্দ্রদুম্ন ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান শুরু করেন।

 

গভীর ধ্যান করার পর স্বপ্নে ভগবান

বিষ্ণু রাজাকে জানান যে, পুরীর কাছে একটি নদীতে একটি কাঠের টুকরো ভেসে যাচ্ছে। সেই কাঠের টুকরো দিয়ে তাঁর বিগ্রহ তৈরি করতে হবে। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা সেই জায়গায় দ্রুত যান। গিয়ে দেখতে পান সত্যিই নদীতে একটি কাঠের টুকরো ভেসে যাচ্ছে। কাঠের টুকরোটি তুলে নিয়ে এসে তিনি শিল্পীকে দিয়ে বিগ্রহ তৈরি করানোর কাজ শুরু করেন। কিন্তু যতবারই সেই শিল্পী কাঠের টুকরোটি কাটতে যাচ্ছেন, ততবারই সেটি ভেঙে যাচ্ছে।এমনভাবে কীকরে বিগ্রহ তৈরি হবে? চিন্তায় পড়ে যান রাজা। তখন বিশ্বকর্মা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু বিশ্বকর্মার একটাই শর্ত ছিল যে, তিনি যতক্ষণ কাজ করবেন, তাঁকে কোনওরকম বিরক্ত করা চলবে না। রাজা সেই শর্তে রাজি হয়ে যান। একটি বন্ধ ঘরের মধ্যে বিশ্বকর্মাও বিগ্রহ তৈরির কাজ শুরু করেন। দু- সপ্তাহ পরে একদিন যখন সেই বন্ধ ঘর থেকে কোনও আওয়াজ আসছিল না। রাজা ইন্দ্রদুম্নের স্ত্রী বলেন যে, তাঁদের এখনই ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখা উচিৎ যে সব ঠিকঠাক আছে কিনা।

 

এদিকে রাজা ইন্দ্রদুম্নের ঘরে প্রবেশের কোনও ইচ্ছাই ছিল না। আবার কোনও আওয়াজ না পাওয়ায় তিনি চিন্তাতেও ছিলেন। তাই তাঁর কাছে ঘরে প্রবেশ করা ছাড়া আর কোনও উপায়ও ছিল না। অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও তিনি ঘরে প্রবেশ করেন। ঘরে ঢুকে দেখেন, সেখানে কোনও কারিগর নেই। শুধু অসম্পূর্ণ একটি বিগ্রহ রয়েছে। রাজা বিশ্বকর্মার আদেশ অমান্য করার জন্য অনুতাপ করেন।

 

তখনই দৈববাণী হয়। ভগবান বিষ্ণুই দৈববাণী করে বলেন যে আকৃতির বিগ্রহ তৈরি হয়েছে

সেই বিগ্রহই যেন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভগবান বিষ্ণুর আদেশ মতো রাজা ইন্দ্রদুম্ন সেই অসম্পূর্ণ বিগ্রহই প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার হাত-হীন অসম্পূর্ণ বিগ্রহের পুজো শুরু হয়।

 

স্নান যাত্রা উপলক্ষে সারা সপ্তাহ জুড়ে চলতে থাকবে জগন্নাথদেব প্রসঙ্গে ধারাবাহিক পর্ব। থাকবে অনেক পৌরাণিক ঘটনা

এবং ব্যাখ্যা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।