কালী কথা – সোনার কালী বাড়ির ইতিহাস
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আজ কালী কথায় আপনাদের বর্ধমানের এমন এক ঐতিহাসিক কালী পুজোর কথা জানাবো যে
পুজো বর্ধমান রাজ পরিবারের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।
যদিও দেবীকে এখানে ভুবনেশ্বরী রূপে পুজো করা হয়।এই কালী মন্দির সোনার কালীবাড়ি নামেই বেশি জনপ্রিয়। মন্দির বেশ পুরোনো ১৮৯৯
সালে এই সোনার কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বর্ধমানের রাজা মহতাব চাঁদ।
বাংলার বহু কালী মন্দিরের ন্যায় এই কালী মন্দির তৈরির সাথেও জড়িত দেবীর স্বপ্নাদেশ।
বর্ধমানের রাজার স্ত্রী রানি নারায়ণী দেবী ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। শোনা যায় ধর্মপ্রাণ স্ত্রী স্বপ্নে দেবীকে দেখে ছিলেন এবং স্বপ্নাদেশ অনুসারে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।
সুন্দর শ্বেতপাথর দিয়ে তৈরী এই মন্দির এবং স্ফটিক দিয়ে তৈরী এই মন্দিরের দেওয়ালে বাহারি কারুকাজ আর নকশা খোদাই করা।প্রবেশপথের উঠোনে দুটো বড় আকারের পাতকুয়ো আছে। যা খরা এবং জলাভাবেও কখনও শুকোয় না।আজও এই কুপের জলেই এই মন্দিরের সমস্ত কাজকর্ম হয়। এই পাতকুয়া নিয়েও মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।
প্রবেশ পথ লাগোয়া পরিসরে দেখা মিলবে
বহু প্রাচীন এক নহবতখানার যা রাজা স্বয়ং নির্মাণ করিয়ে ছিলেন।শুরুতে এখানকার কালীমূর্তিটি সোনারই ছিল। একবার সেই মূর্তি চুরি যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় বাসিন্দাদের চেষ্টায় নতুন করে দেবী কালীর মূর্তি স্থাপন করা হয়।সোনার কালী মূর্তির জন্যেই এই মন্দিরেরই নামকরণ হয়
সোনার কালীবাড়ি
এই মন্দিরের অন্যতম আকর্ষণ এবং দর্শনীয় বস্তু দেবীর পায়ের কাছে রাখা এক শঙ্খ। যার শব্দে মুখরিত হয় গোটা কালীবাড়ির সন্ধ্যা আরতি। এই শঙ্খের আয়তন বিরাট । প্রায় একহাত লম্বা।জনশ্রুতি আছে যে মহারানি নারায়ণী দেবী সমুদ্রতট থেকে এই শঙ্খ সংগ্রহ করেছিলেন। দেবীমূর্তিতেও রয়েছে বিশেষত্ব। এখানে দেবী কালীর জিহ্বা দেখা যায়না এবং দেবীর পায়ের নীচে মহাদেব নেই কারন দেবী এখানে উগ্র রনং দেহি রূপে নেই।দেবীর শান্ত এবং সৌম মূর্তি এখানে বিরাজ করছে।
সোনার কালীবাড়ী বা ভুবনেশ্বরী মন্দিরে নিত্যপুজো এবং সন্ধ্যা আরতি হয়। ভোগ বিতরণ হয় নিয়মিত।কার্তিক অমাবস্যার কালীপুজোয় এখানে খিচুড়ি ভোগের সঙ্গে থাকে মাছের টকও। বর্তমানে পশুবলি বন্ধ। বদলে হয় চালকুমড়ো বলি। পুজোর বাকি সব রীতি নীতি সেই
আগের মতোই আছে।
ফিরে আসবো কালী কথার আগামী পর্ব নিয়ে থাকবে অন্য এক পুজোর ইতিহাস এবং নানা অলৌকিক ঘটনা।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।