বামা খ্যাপার আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে এই বিশেষ ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের আজকের পর্বে বামা ক্ষ্যাপার ব্যাক্তিত্বর একটি বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করবো।তবে শুরুটা করবো স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে।
ভারতের আধ্যাত্মিক জগতের বহু সাধু সন্ন্যাসিদের সাথে সাক্ষাৎ করে ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তালিকায় যেমন ছিলেন কাশির ত্রৈলঙ্গ স্বামী তেমনই তারাপীঠের বামা খ্যাপার সাথেও বিবেকানন্দর সাক্ষাৎ হয়ে ছিলো।
স্বামীজী তখন কলেজ ছাত্র সবে রামকৃষ্ণের সংস্পর্শে এসেছেন সেই সময়ে তারাপীঠে গিয়েছিলেন বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন করার জন্য।
এই প্রসঙ্গে এক বন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে নরেন্দ্রনাথ বলেছিলেন যে, ব্রহ্মজ্ঞানী সাধকদের চারটি অবস্থা হয় যথা, বালকবৎ, জড়বৎ, উন্মাদবৎ এবং পিশাচবৎ। ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের মধ্যে বাকি তিনটি অবস্থা থাকলেও পিশাচবৎ অবস্থা ছিল না। তাই নরেন্দ্রনাথ পিশাচ লক্ষণধারী বামাক্ষ্যাপার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।ঠিক কি এই বৈশিষ্ট
তা জানতে হলে একটি অলৌকিক ঘটনার কথা জানতে হবে।
সময় টা ১২৭৫ সনের এক গ্ৰীষ্মকাল। সেই বছর বৃষ্টি অভাবে বীরভূম জুড়ে প্রবল খরা। তখন হতাশাগ্ৰস্থ চাষীরা অনাহারে মৃত্যুবরণের ভয়ে বামদেব বাবার শরনাপন্ন হচ্ছে। তাদের আশা বামা খ্যাপা তার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে এই প্রকৃতির রোষ থেকে তাদের বাঁচাবেন কয়েকজন চাষী একদিন বাবাকে বললো “তুমিতো তাঁরা মায়ের প্রিয় সন্তান তুমি থাকতে মা তাঁরা থাকতে আমরা অনাহারে মরবো? তুমি একটু তাঁরা মাকে বলো না।” সত্যি বিচলিত হলেন বামা খ্যাপা। তিনি
প্রচন্ড ক্রোধান্বিত হয়ে মায়ের মন্দিরে গিয়ে বিগ্ৰহের সম্মুখে বললো-“তুই বেটি দিন রাত বসে বসে খাচ্ছিস,আর তোর সব সন্তানরা উপোস করে মরছে। দাঁড়া তোর মাথায় বাজ ফেলবো।”
বামার এই উগ্র রূপ দেখে উপস্থিত সকল চাষী
এবং ভক্তরা সভীত হয়ে বাড়ি ফিরে গেলো।
ঠিক মধ্যাহ্নে প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে মন্দিরের চূড়ায় বাজ পড়ল তা দেখে সবাই উপস্থিত হয়ে দেখলো মন্দিরের একপাশের কান্নিস ভেঙে পড়েছে কিন্তু গর্ভ গৃহ এবং বিগ্ৰহের কোনো ক্ষতি হয়নি।বামদেব বাবা সব শুনে মায়ের চরন তলে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। এবং শোনা যায় এই সময়ে বামদেব বাবা তারা মায়ের হাস্যরত শ্রীমুখ দেখে বুঝতে পারলেন যে মা স্ব-ইচ্ছায় নিজের মন্দিরে বাজ
ফেলে তাকে বাক্ সিদ্ধ প্রমাণ করতে চেয়েছেন আসলে এই বাজ পাড়া মায়েরই এক লীলা।
এবং এই ঘটনা থেকে হয়তো বোঝা যায় স্বামীজী সেদিন তার বন্ধুকে কি বলতে চেয়েছিলেন।
সত্যি যখন রেগে যেতেন বামা খ্যাপার মধ্যে
জেগে উঠত এক উগ্রতা। এক ধরণের
তামসিক পৈশাচিকতা। আবার ঠান্ডা হলে তিনি শিশুর মতোই সহজ এবং স্বাভাবিক।
ফিরে আসবো পরবর্তী পর্বে। চলবে এই ধারাবাহিক আলোচনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।