শ্রীচৈতন্য দেবের জন্মভূমি নদীয়া যদিও বৈষ্ণব ধর্মের প্রাণ কেন্দ্র কিন্তু এই নদীয় তেই আছে এমন এক কালী পুজোর ইতিহাস যা নানা কারণে বেশ তাৎপর্য পূর্ণ।মাজদিয়া অঞ্চলের কৃষ্ণগঞ্জ এর ডাকাত কালী রক্ষা কালী রূপেই পূজিত হয়ে আসছেন বহু বছর ধরে।এই পুজোর সঙ্গে জড়িত আছে স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অধ্যায় ।
শোনা যায় স্বাধীনতার আগের ব্রিটিশদের অত্যাচার যখন চরমে তখন ইংরেজ দের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় তারা সংঘবদ্ধ হয়ে সসস্ত্র সংগ্রাম করবে। প্রয়োজন তারা ব্রিটিশ দের থেকে লুট করবে অর্থ এবং বিপ্লব শুরু করবে।পরিকল্পনা মতো ইংরেজ কোম্পানির ট্রেন লুট করে বিপ্লবীরা আশ্রয় নেয় জঙ্গলে।
এই দলের সর্দার ছিলেন হেমন্ত বিশ্বাস। সেই সময়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল
সেই লুট করা অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী। ব্রিটিশ বাহিনী
যথা সাধ্য চেষ্টা করে স্বাধীনতা সংগ্রামী বা তাদের ভাষায় ডাকাত দের ধরতে। কিন্তু দূর্গম অরণ্য ভেদ করে তাদের কাছে পৌঁছানো সহজ ছিলো না। অবশেষে হাল ছেড়ে দেয় ব্রিটিশ বাহিনী।
দলের কাউকে খুঁজে না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ব্রিটিশ বাহিনী ফিরে যাওয়ার পরের দিন ছিল দীপান্বিতা আমাবস্যা। সেই দিন থেকে এখানে তারা কালীপুজো শুরু করেছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দলের মনে আস্থা ছিলো যে স্বয়ং মা কালী তাদের সহায়। দেবীর আশীর্বাদেই পরাস্ত হয়েছে ব্রিটিশ বাহিনী। দেবীই তাদের এবং গ্রাম বাসীদের রক্ষা করেছেন।
সেই থেকে এইখানে রক্ষা কালী রূপে দেবী কালীর পুজো চলে আসছে। অনেকের কাছেই এই পুজো ডাকাত কালীর পুজো নামে পরিচিত।আজও মানুষ বিশ্বাস করেন এই অঞ্চলকে স্বয়ং এই রক্ষা কালী সব বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
পুজো হয় শাক্ত মতে। এককালে নর বলীর দেয়া হতো বলে জনশ্রুতি আছে। বর্তমানে পুজোর ভোগে নিরামিষ খিচুড়ি থেকে একাধিক রকম ভাজা তরকারি ফল মিষ্টি দেওয়া হয়।
সমগ্র নদীয়া জেলা জুড়ে দেবীর অসংখ্য ভক্ত আছেন। কালী পুজোর সময়ে বহু দূর দূরান্ত
থেকে মানুষ আসেন। কালী পুজোর পাশাপাশি এখানে এসে মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ও শ্রদ্ধা জানিয়ে যান।
ফিরে আসবো স্বরস্বতী পুজো উপলক্ষে বিশেষ পর্ব নিয়ে। আগামী দিনে। তারপর যথারীতি চলতে থাকবে বাংলার কালী। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।