পলাশীর যুদ্ধের আগে পর্যন্ত অর্থাৎ নবাব আলিবর্দি খাঁ যখন বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সেইসময়ে বাংলায় মারাঠা বর্গীদের আক্রমণ ছিলো নিত্য নৈমিত্ত ঘটনা। বার বার মারাঠা দস্যুরা এই বাংলায় হানা দিতো। লুটপাট করে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করে আবার ফিরে যেতো। এই মারাঠা বর্গীদের দলের নেতা ছিলেন ভাস্কর পন্ডিত। আজ বাংলার কালী পর্বে যে কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো
তার সাথে জড়িত ভাস্কর পন্ডিতের কথা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরের মালঞ্চের দক্ষিণা কালী মন্দিরের কালী এলাকায় পরিচিতি ডাকাত কালি হিসেবে।শোনা যায় মারাঠা দস্যু ভাস্কর পন্ডিত এই মন্দিরে আত্মগোপন করে থাকতেন।সেই সময়ে এই অঞ্চল ছিলো ঘন
জঙ্গলে ভর্তি এবং হিংস্র জীবজন্তুও এই জঙ্গলে থাকতো। যখন দফায় দফায় নবাবের সেনার সাথে দস্যু দের সংঘাত দেখা দিতো তখন ভাস্কর পন্ডিত ধরা না পড়ার জন্য এই মন্দির বেছে নিয়েছিলেন। এই মন্দিরে তিনি আশ্রয় নিতেন এবং কোথাও বেরোনোর আগে এখানে পুজো দিয়ে বের হতেন। সেই থেকেই এই কালির নাম ডাকাত কালী।
আজও কিছু মানুষ ডাকাত কালী বলেই ডাকেন এই দক্ষিনা কালীকে।যদিও এখন এই অঞ্চল উন্নত
এবং সব শ্রেণীর মানুষ আসেন পুজো দিতে।
এই পুজোর ভার এক সময় গ্রহণ করেন স্থানীয় জমিদার গোবিন্দ রায় মহাশয় এবং তার প্রচেষ্টায়
মন্দিরের সংস্কার হয়। সেও প্রায় তিনশো বছর আগের কথা।জমিদারের অবর্তমানে গঠন হয় একটি ট্রাস্ট সেই ট্রাস্ট আজও নিষ্ঠার সাথে পুজোর সব দায়িত্ব পালন করে আসছে।
প্রতি বছর কালিপুজো ধুমধামে হয় এখানে। সেই তিথিতে প্রচুর ভক্তদের ভিড় হয়। বর্তমানে
এখানে রয়েছে চার চালার মন্দির। মন্দিরের গায়ে রয়েছে টেরাকোটার কাজ। মায়ের মুখশ্রী মোম দিয়ে তৈরি। দক্ষিনা কালীর পুজো হয় তন্ত্র মতে।
বহু মানুষ এখানে নিজের মনোস্কামনা জানিয়ে সুফল পেয়েছেন।
আবার ফিরে আসবো বাংলার কালী নিয়ে পরবর্তী পর্বে। থাকবে এমন সব কালী মন্দিরের বর্ণময় ইতিহাস এবং অলৌকিক ঘটনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।