আজ একান্ন পীঠের চল্লিশতম পীঠ কন্যাশ্রম নিয়ে আলোচনা করবো।যদিও প্রকৃত স্থানটি নিয়ে বিতর্ক আছে। কারো মতে স্থানটি দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী, কারো মতে কন্যাকুব্জে৷ কিন্তু বেশিরভাগ পন্ডিতের মতে এই শক্তিপীঠ বাংলাদেশের কামরুপে অবস্থিত।
বারাহী তন্ত্রে উল্লেখ আছে চন্দ্রনাথ মন্দিরের পঞ্চক্রোশ দূরত্বের মধ্যেই কুমারীকুণ্ড শক্তিপীঠ অবস্থিত। বিখ্যাত তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ তাঁর বৃহৎ তন্ত্রসার গ্রন্থে কুমারীকুণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন এই পীঠস্থান তান্ত্রিক দীক্ষা লাভের উপযুক্ত স্থান। বর্তমানে স্থানটি বাংলাদেশের চট্টগ্রামজেলার অন্তর্ভুক্ত।
প্রাচীনকালে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি অবশ্য বর্তমানে দেখতে পাওয়া যায় না। দুর্গম পাহাড়ে এক গুহায় দেবী বিরাজ করছেন। পাহাড়ের নিচে কুমারী কুন্ড নামে এক রহস্যময় কুন্ড আছে। গভীর রাতে এই কুন্ডে আগুনের শিক্ষা এবং অশরীরী কোনো শক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় বলে জনশ্রুতি আছে।
কন্যাশ্রমে পীঠাধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বাণী হলেন মূলদুর্গার অনুরূপ। ধ্যানমন্ত্রানুসারে তিনি সিংহবাহিনী, তাঁর কপালে অর্ধচন্দ্র, তাঁর অঙ্গবর্ণ সবুজ৷ তিনি ত্রিনয়নী, তাঁর চার হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ শোভা পায়। মুক্তা মাণিক্য শোভিত অলংকারে তিনি সুশোভিতা।দেবী সবার মনোস্কামনা পূর্ণ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়।
মহাভারতে ঋষি পুলস্থ্য যুধিষ্টিরকে এই স্থানে এসে পুজো পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবার
পৌরাণিক দিক দিয়ে এই স্থানের আলাদা মাহাত্ম আছে।ঋষি গর্গের কন্যা মনের মতো বর পাওয়ার জন্য এই স্থানে এসে তপস্যা করেন। কিন্তু যখন তার তপস্যা সম্পূর্ণ হয় তখন তার যৌবন অতিক্রান্ত। রূপ যৌবন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। এমন সময় দৈব আদেশ পেয়ে শৃঙ্গবান নামে
এক যুবক ঋষি কন্যাকে বিবাহ করতে সম্মত হন।
অলৌকিক ভাবে বিবাহের পরেই সেই কন্যা এক সুন্দরী যুবতীতে পরিণত হন এবং শৃঙ্গবান কে দাম্পত্য জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে অদৃশ্য হন।
সেই থেকে এই স্থানে এসে সাধনা করলে সব মনোস্কামনা পূর্ণ হয় বলেই বিশ্বাস।
এই স্থান তন্ত্র সাধনা এবং তন্ত্র মতে দীক্ষা গ্রহণের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান বলে বিবেচিত হয়।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য একটি
শক্তি পীঠ সংক্রান্ত জানা অজানা কথা নিয়ে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।