একান্ন পীঠ – প্রয়াগ

37
সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত একান্ন
পীঠের অন্যতম শক্তি পীঠ হল উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের ত্রিবেণী সঙ্গমে অবস্থিত প্রয়াগ শক্তিপীঠ যা নিয়ে আমার আজকের পর্ব।
প্রয়াগে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর মিলন স্থলে অবস্থিত এই শক্তিপীঠ প্রয়াগ শক্তিপীঠ নামেই বিখ্যাত।পুরান অনুসারে এখানে সতীর হাতের দশটি আঙুল পতিত হয়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবীকে অলোপি মাতা বা ললিতা রূপে পুজো করা হয় এবং দেবীর ভৈরব হলেন ভব যিনি অনেকের কাছে বেনীমাধব।
অলোপী কথার অর্থ হল লুপ্ত না হওয়া।সতীর দেহ যখন বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের আঘাতে খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাওয়ার পরেও দেবীর অস্তিত্ব রক্ষিত ছিল তার দেহ খণ্ড গুলির মধ্যেই। তাই লুপ্ত হয়ে লোপ না পাওয়ায় দেবীর নাম হয় অলোপি।
প্রাচীনকালে এই ত্রিবেণী সঙ্গম অঞ্চল ঘন বন জঙ্গলে ঢাকা ছিল, আর সেই সব ঘন জঙ্গলে থাকতো দুর্ধর্ষ সব ডাকাত। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যখনই কোন বিবাহ যাত্রীর দল যেত, ডাকাতরা তাদেরকে আটক করে সর্বস্ব লুট করে নিত।
সেই সময়ে দেবী ললিতা রূপে এই অঞ্চলের রক্ষাকত্রী রূপে দেখা দেন।
আবার পুরান মতে সত্য যুগে ভন্ডাসুর নামে এক অসুর শিবের বর পেয়ে দেবতাদের হেনস্থা করতে শুরু করে।স্বর্গ অধিকার করে নেয়ার উপক্রম দেখা দিলে ইন্দ্র এবং আরও অন্যান্য দেবতারা যজ্ঞের মাধ্যমে মহাশক্তির জাগরণ ঘটান।তখনই যজ্ঞের আগুন থেকে রক্ত বস্ত্র পরিহিতা চতুর্ভূজা দেবী ললিতার আবির্ভাব ঘটে। ভন্ডাসুর এর সঙ্গে যুদ্ধ করে সর্বলোক পুনরায় অসুর মুক্ত করে দেন।
দেবীর সেই ললিতা রূপেই এই শক্তিপীঠে
পূজিতা হন।
প্রয়াগ শক্তিপীঠে মূলত তিনটি মন্দির আছে, অক্ষয়বট, মীরাপুর এবং অলোপি।
এই মন্দিরের বিশেষত্ব হলো এখানে একটি পালকিকে দেবী রূপে পূজা করা হয়।তার একটি কারন হলো দেবী পালকিতে করে নববধূ রূপে এখানে আবীরভূতা হয়েছিলেন বলে মনে করা হয়।
যদিও পালকির পাশাপাশি দেবীর নব দুর্গা রূপের পুজোও হয় দেবীর বেদির নিচে একটি গর্ত তে জল আছে। মনে করা হয় যে, এই জল আসলে স্বয়ং মা গঙ্গার। অক্ষয় বটের নিচে দেবীর
ভৈরবের মন্দির রয়েছে।
প্রয়াগ এই জায়গাটি সাধারণভাবে কুম্ভ মেলার জন্য বিখ্যাত হলেও প্রয়াগ শক্তি পীঠে নবরাত্রি উৎসব খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয়।নবরাত্রীর সময় এখানে প্রচুর লোক জমা হয়, নিয়ম মত নারকেল ফাটিয়ে নারকেলের জল দেবীকে অর্পণ করে অর্ধেক নারকেল মন্দিরের সমর্পণ করেন ভক্তরা।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য একটি শক্তিপীঠের কথা নিয়ে।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।