একান্ন পীঠ – উজানী

31
বাংলায় অবস্থিত একান্ন পীঠের অন্যতম সতীপীঠ উজানি প্রসঙ্গে আজকের একান্ন পীঠ পর্ব।পীঠনির্ণয় তন্ত্র মতে উজানী হলো ত্রয়োদশ সতীপীঠট।
পৌরানা অনুসারে উজানীতে সতীর বাঁ হাতের কনুই পড়েছিল। এখানে দেবী মঙ্গলচন্ডী রূপে পূজিতা হন এবং দেবীর ভৈরব হলেন কপিলেশ্বর।
পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার কোগ্রামে এই শক্তি পীঠ অবস্থিত।
অন্নদা মঙ্গল গ্রন্থ অনুসারে ধনপতি সওদাগর ছিলেন শিবভক্ত তিনি মঙ্গলচন্ডীর পূজা করতে অস্বীকার করেন।একবার বাণিজ্যে বেরোবার আগে তিনি মায়ের ঘটে লাথি মেরে বাণিজ্যে গিয়েছিলেন। দেবীর আক্রোশে তিনি আর উজানি নগরে ফিরে আসেননি।সওদাগরের স্ত্রী খুল্লনা মা মঙ্গলচন্ডীকে পুজোয় সন্তুষ্ট করে তার স্বামীর ফিরে আসবার জন্য প্রার্থনা করতেন।সবাই যখন সওদাগরের ফিরে আসার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছে মা মঙ্গল চন্ডীর কৃপায় অলৌকিক ভাবে সওদাগর একদিন ফিরে আসেন। সেই থেকে মর্তে মঙ্গলচণ্ডীর পুজোর প্রচলন হয় ।
বর্তমানে অজয় নদের পাড়ে এই মন্দির অবস্থিত।
মূল মন্দিরটিতে প্রথমে একটি বারান্দা আছে। তার ভিতরে আয়তাকার গর্ভগৃহ। এই গর্ভগৃহের মধ্যে মা মঙ্গলচণ্ডীর ছোটো কালো কষ্টি পাথরের দশভূজা মূর্তি রয়েছে। দেবী মঙ্গল চন্ডীর মূল মন্দিরের সামনে একটি ছোট নাটমন্দির রয়েছে ।
দেবীর ভৈরব কপিলাম্বর শিব লিঙ্গ আছে মন্দির চত্বরে শিবলিঙ্গের সামনে নন্দীর কালো পাথরের একটি ছোট মূর্তিও আছে।
দেবী উজানী বা মঙ্গল চন্ডী এই অঞ্চলে অত্যান্ত জাগ্রত এবং দয়াময়ী। তার কৃপা পেতে বহু দূর থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসেন। দেবীর মন্দিরে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রতি মঙ্গলবার বিশেষ পুজো হয়।কোগ্রামের অন্যতম বিখ্যাত উৎসব হচ্ছে উজানির মেলা।এছাড়াও সারাবছরই এখানে দুর্গাপূজা , কালীপুজো সবই হয়।তবে কোনো আলাদা মূর্তি হয় না ।সারাবছর দেবীর অন্ন, ভাজা,
ডাল, পায়েস , মাছ ইত্যাদি সহকারে নিরামিষ ভোগ হয়।শুধু মাত্র দুর্গাষ্টমীর দিন
দেবীকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়।
আবার আগামী পর্বে ফিরে আসবো অন্য একটি শক্তি পীঠের ইতিহাস এবং পৌরাণিক ব্যাখ্যা
নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।