বনেদি বাড়ির পুজো – আঢ্য বাড়ির দূর্গা পুজো

81

একটি খুব প্রচলিত জনপ্রিয় ছড়া হয়তো আপনারা সবাই শুনেছেন। এই ছড়া টির কথা বলছি – “আইকম বাইকম তাড়াতাড়িযদু মাষ্টার শ্বশুরবাড়িরেল কম, ঝমা ঝমপা পিছলে আলুর দমআজকের বনেদিবাড়ির দূর্গাপুজোর এই পর্বের সাথে এই ছড়ার সম্পর্ক আছে।আজ আলোচনা করবো চুঁচুড়ার আঢ্য বাড়ির পুজো নিয়ে যা প্রায় তিনশো বছরের পুরোনো একটি বিখ্যাত পুজো।এই পরিবারের একজন অন্যতম প্রাণপুরুষ, ছিলেন যোগীন্দ্রলাল আঢ্য ওরফে যগু মাস্টার।যখন বাংলায় প্রথম রেলগাড়ি চলতে শুরু হয়সেই সময় হুগলি স্টেশনের স্টেশন মাস্টার ছিলেন যগুবাবু। লোক মুখে বিকৃত হয়ে পরবর্তীতে তিনি যদু মাস্টার উচ্চারিত হন এবং তিনিই এই ছড়ার যদু মাস্টার।তার হাত ধরেই এই পুজোর সূচনা। তারপর থেকে বংশানুক্রমে আঢ্য বাড়িতে হয়ে আসছে পুজো আজও চলছে সেই পুজো।এখানে প্রতিমা শিল্পী থেকে শুরু করে পুরোহিত, রান্নার বামুন ঠাকুর প্রত্যেকেই বংশানুক্রমিকভাবে যুক্ত রয়েছেন আঢ্য বাড়ির পুজোর সঙ্গে। কুমারী পুজোতে যে মেয়েটি বর্তমানে পূজিতা হয়, সেও প্রথম যুগের কুমারী মেয়েটির বংশেরই কন্যা।আঢ্য বাড়িতে দেবী দূর্গা দশভুজা নন তিনি দ্বিভুজা। তিনি এখানে শিবের কোলে অধিষ্ঠাতা। তবে শিবদুর্গার সঙ্গে তাদের পুত্র কন্যারাও থাকেন।আঢ্য বাড়িতে বৈষ্ণব মতে পুজো হয় তবে কুমারীপুজো, যজ্ঞ এবং চণ্ডীপাঠ পালন করা হয় শাক্ত মতে। এই বাড়ির পুজোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য মিষ্টি৷ পুজোর ফলমূল আর মিষ্টি পরিবেশন করা হয় কাঠের বিশাল তেপায়াতে করে।সেই পাত্রের নাম লটকান।আঢ্য বাড়িতে মহালয়ার দিন থেকেই প্রতি সদস্য নিরামিষ আহার করেন। দশমীর দিন পুজো শেষে বাড়ির বিবাহিত মহিলারা আরশিতে মায়ের প্রতিবিম্ব দেখার পর খাওয়া হয় আমিষ । সুদূর অতীতে এই পরিবারে কাঙালি ভোজন এবং বিদায়ের রেওয়াজ ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে আসতেন প্রচুর দরিদ্র মানুষ। এলাহী আয়োজন থাকতো তাদের জন্য। বর্তমানে সেই প্রথা নেই।তবে বাকি সব রীতি নীতি আজও মানা হয়।বনেদি বাড়ির দূর্গা পূজোর পরের পর্ব নিয়েফিরে আসবো যথা সময়ে। থাকবে অন্য কোনো বনেদি বাড়ির দূর্গাপূজোর কথা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।