দূর্গা কথা – মুর্শিদাবাদের রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো

103

মুর্শিদাবাদে নবগ্রাম থানার পশলা গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন রায়চৌধুরী জমিদার বাড়ির পুজোর ঘিরে রয়েছে নানা গল্প নানা কিংবদন্তী। আজকের এই পর্বে লিখবো এই রায় চৌধুরী বাড়ির পুজো নিয়ে।এই বাড়ির দেবী দূর্গাকে বুড়িমা বলেও ডাকা হয়। কেনো এইরূপ নাম তা জানতে হলে পূজোর ইতিহাস জানতে হবে।যেখানে বর্তমানে পুজো মণ্ডপ রয়েছে আগে সেটি জঙ্গলে ঘেরা উঁচু ভূমি বা ঢিবি ছিল।সে প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগের কথা হটাৎ এক সন্ন্যাসিনী গ্রামে আসেন এবং জঙ্গলে ঘেরা উঁচু ঢিবিতে পঞ্চমুন্ডি আসন স্থাপন করে সাধনায় রত হন এবং সিদ্ধিলাভ করেন। এরপর সিদ্ধা সন্ন্যাসিনী পঞ্চমুন্ডি আসনে ঘট স্থাপন করে দশভূজার আরাধনা শুরু করেন। বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে গ্রামবাসীরা বুড়িমা বলে ডাকত। তাই সন্ন্যাসিনীর প্রতিষ্ঠিত এবং পূজিত দুর্গা তখন থেকেই বুড়িমা নামে পরিচিতি লাভ করে। অর্থ্যাৎ রায় চৌধুরী বাড়ির পুজো হলেও এই পুজো রায়চৌধুরী পরিবারের কোন পূর্বপুরুষ কিন্তু শুরু করেননি শুরু হয়েছিলো এক সন্ন্যাসীনীর হাতে।পরবর্তীতে সেই সন্ন্যাসিনীর মৃত্যুর পরে পাশলার জমিদার মথুরানাথ রায়চৌধুরী সন্ন্যাসিনীর নির্দেশে পুজো চালিয়ে যেতে থাকেন। তবে সেই সময়ে ঘট পুজো হত, মূর্তি পুজো হত না। শোনা যায়,  পরবর্তী সময়ে জমিদার পরিবারের এক সদস্যকে মূর্তি গড়ে পুজো করার নির্দেশ দেন বুড়িমা। শুরু ঘটের বদলে দূর্গা মূর্তির আরাধনা।রায়চৌধুরী বাড়িতে উমা কিন্তু দশভূজা নন, তিনি এখানে চতুর্ভূজা। এই  দুর্গা পুজোর প্রধান বৈশিষ্ট্য, একই মণ্ডপের ছাদের নীচে তিনটি বেদিতে ত্রয়ী দুর্গার আরাধনা।জমিদার পরিবারের দুই শরিকের মধ্যে দ্বন্দ্ব হওয়ায় দুজনে  একই মণ্ডপের ছাদের নিচে মূল বেদীর ডান দিকে আরও দুটি বেদী নির্মাণ করে দুর্গা পুজো শুরু করেন। পঞ্চমুণ্ডি আসনে অধিষ্ঠিত থাকেন বুড়িমা। দুই পাশে আরো দুই বিগ্রহর পুজো হয়।এখানে রথের দিন দেবীর কাঠামোয় মাটির প্রলেপ দিয়ে পুজোর সূচনা হয় তারপর ষষ্ঠীর দিন সকালে তিনটি প্রতিমাকে তিনটি বেদীতে স্থাপন করা হয়। নিয়ম অনুসারে গ্রামের পুকুর থেকে তিনজন পুরোহিত তিনটি ঢাক সহযোগে তিনটি ঘট ভরে তিন দেবীকে বেদিতে শাস্ত্র মতে প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু হয় পুজো।অতীতে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি মালদা, নদিয়া ও বীরভূম জেলা থেকেও বহু মানুষ পুজোর চারদিন পাশলা গ্রামে ভিড় জমাতেন। বর্তমানে জমিদারি ঠাট বাট আর নেই। তবে নিয়ম নিষ্ঠা এবং মানুষের আগ্রহ আছে আগের মতোই।ফিরে আসবো বোনেদি বাড়ির পূজোর পরের পর্ব নিয়ে আগামী দিনে। যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।