পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
দেবী মাহাত্ম পর্বে আজ আপনাদের বাংলার
লোক কথায় উল্লেখিত দেবী কমলে কামিনীর কথা বলবো।জানাবো এমন এক বনেদি বাড়ির কথা যেখানে কুলদেবী রূপে আছেন
দেবী কমলে কামিনী।
কমল অর্থাৎ পদ্ম এবং কামিনী অর্থাৎ কন্যা।প্রস্ফুটিত চৌষট্টিদল পদ্মের ওপরে বসে এক দেবী যার দুই হাতে দুই হাতি।দেবী আদ্যাশক্তির একটি বিশেষ রূপ কমলে কামিনী।তিনি একই সাথে দয়া মায়া হীনা আবার বিশেষ ক্ষেত্রে পরম করুণাময়ী।
বণিক ধনপতি এবার সুদূর সিংহল দেশ থেকে চন্দন আনতে যায় । যাত্রাকালে দেবী চণ্ডীকে অবজ্ঞা করায় একটি বাদে তার সব ডিঙাই জলে ডুবে যায়।সেই সময় দেবী চণ্ডী প্রথম তাকে কমলে কামিনী মূর্তি দেখান।পরবর্তীতে ধন পতি সিংহল রাজের অনুরোধে তাকে সেই রূপ দেখাতে ব্যর্থ হন এবং রাজার কোপে পড়েন।চন্ডী মঙ্গল কাব্যের এই উল্লেখ আছে যে যখন ধনপতি পুত্র শ্রীমন্ত বাণিজ্য করার পথে বিপদে পড়েন।ঝড়ে মাঝ সমুদ্রে জলে ডুবে যাচ্ছিলেন সেই সময় মা দুর্গা কমলে কামিনী রূপে দেখা দেন এবং তার হাত ধরে তোলেন।পরবর্তীতে স্বপরিবারে ধনপতি শেঠ দেবী কমলে কামিনীর পুজোয় ব্রতী হন।
বাংলার প্রাচীন পারিবারিক পুজো গুলির মধ্যে অন্যতম বনগাঁর দাঁ বাড়ির দুর্গাপুজো। দেবী এখানে কমলে কামিনী রূপে পূজিতা হন।
প্রায় দেড়শ বছর আগে বৈঁচি থেকে গোপালনগরের দাঁ বাড়িতে এসে পুজোর সূচনা করেন এই বংশের কৃষ্ণচন্দ দাঁ । শোনা যায় সেই সময় বৈঁচিতে বর্গী আক্রমণ হওয়ার সেখান থেকে বাঁচার জন্য কৃষ্ণচন্দ্র দাঁ তার পরিবার নিয়ে চলে আসেন গোপালনগরে। ইছামতি নদী পথে গোপালনগরে এসে একদিকে বাণিজ্য শুরু করেন তিনি এবং ক্রমেই ব্যবসায় প্রচুর সুনাম ও সম্মাপ্তি অর্জন করে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার অন্যতম ধনী।এই বংশের কুল দেবী হলেন কমলেকামিনী।
বর্গীর আক্রমন থেকে বাঁচতে পরিবার যখন অন্যত্র স্থানান্তরিত হয় সেই সময় থেকে কমলে কামিনী রূপেই গোপালনগর দাঁ বাড়িতে দেবীর পুজো শুরু হয় । আজও সেই পরম্পরা চলছে।
জনশ্রুতি আছে দেবীর কৃপায় প্রভূত ধন সম্পত্তি এবং নাম যশ ও খ্যাতি লাভ হয়।
চলতে থাকবে মন্দির রহস্য এবং দেবী মাহাত্ম নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা ফিরে আসবো আগামী পর্বে। নতুন বিষয় এবং জানা অজানা অনেক নতুন তথ্য ও আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা নিয়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।