বিভিন্ন শাস্ত্রে আলাদা আলাদা ভাবে অম্বুবাচিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদিও আসল কথা একই।অম্বুবাচি প্রাক্কালে আসুন জেনে নিই অম্বুবাচি সম্পর্কে শাস্ত্রে কি বলছে এবং কেনই বা এই রীতি এতো তাৎপর্যপূর্ণ।সংস্কৃত শব্দ “অম্ব ” মানে জল আর “বাচি” মানে আরম্ভ বা সূচনা৷ প্রচন্ড গরমের পর আষাঢ়ের এই সময় পৃথিবী হয় সিক্ত ও বীজ ধারনের উপযোগী ৷বর্ষার জলে ভেজা এই সময় মনে করা হয় মা বসুমতী ঋতুমতী হয়েছেন ৷ তার জীবন চক্রের এই বিশেষ সময় কালকে অম্বুবাচি হিসেবে পালন করা হয়।জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে রাশি চক্রের ২৭টি নক্ষত্রের মধ্যে সূর্য যখন আদ্রা নক্ষত্রে প্রবেশ করে সেইতিন দিন কুড়ি দন্ড সময়টাই “অম্বুবাচি ” ৷রজঃস্বলা নারী যেমন এই সময় অনেক কাজ করেন না তেমনই প্রকৃতির ক্ষেত্রে এই সময়ে বিশেষ কিছু রীতি নীতি পালন করা হয়।এই দিনগুলিতে চাষিরা কৃষিকাজ বন্ধ রাখেন ৷ সন্ন্যাসী , যোগী , বিধবা মহিলারা এই তিন দিন রান্না করা ও আমিষ খাবার খান না ৷শাস্ত্রে আছে -“ত্বমেব প্রকৃতিদেবী ত্বমেব পৃথিবী জলম্ ৷ত্বমেব জগতাং মাতা ত্বমেব চ জগন্ময়ী ৷’’অর্থাৎ পৃথিবী হলেন ধরিত্রী মাতা।সনাতন ধর্ম এবং সংস্কৃতিতে নারী ও ধরিত্রী এই দুইয়ের উর্বরতা এবং অনুর্বরতার স্বাভাবিক চক্রটি অত্যন্ত পবিত্র পর্যায় রূপে দেখা হয় এবং উৎসব রূপে পালিত হয় কামখ্যায়।এই প্রসঙ্গে শাস্ত্রে আছে“কামাখ্যে কামসম্পন্নে কামেশ্বরী হরপ্রিয়ে ৷ কামনাং দেহি মে নিত্যং কামেশ্বরী নমোহস্তুতে “!পুরান অনুসারে সতী বা পার্বতীকে দেহত্যাগ করার পর শিব তাকে নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করেছিল তাতে পৃথিবী অশান্ত হয়ে পড়েছিল। তখন শিবকে শান্ত করার জন্য বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ৫১ টি টুকরা করে। এবং সেইগুলি বিভিন্ন জায়গায় পড়েছিল। যার মধ্যে বিষ্ণুর চক্রে ছিন্ন সতীর যোনী পতিত হয় কামাখ্যায় পরবর্তীতে সৃষ্টি এবং উর্বরতা এবং সর্বোপরি নারী শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে কামাখ্যা। ধীরে ধীরে তাই অম্বুবাচি পালনের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয় এই সতী পীঠ।শুধু অম্বুবাচির স্বরূপ কি তা নয় সেই সময় কি করণীয় কি করণীয় নয় সেই নিয়েও শাস্ত্রে ব্যাখ্যা আছে।বামকেশ্বর তন্ত্রের ৫৫ তম অধ্যায়ে আছে – ‘’আষাঢ়ে প্রথমে দেবী অম্বুবাচী দিনত্রয়ং ।সংগোপন গৃহে দেবিং স্থাপয়েদ্বস্ত্র বেষ্টনে ।।রাত্রৌ মহানিশা যোগে পঞ্চাচারেণ দেশিকঃ।পূজয়িত্বা বলিং দত্বা হোময়িত্বা বিহারয়েৎ।।‘’অর্থাৎ,- আষাঢ়ের প্রথমে অম্বুবাচী দিবসত্রয়ে দেবীকে গুপ্তভাবে বস্ত্রাদি দ্বারা বেষ্টন করিয়া রাখিবে । অম্বুবাচী নিবৃত্তি হইলে সাধক মহানিশাতে পঞ্চতত্ত্ব দ্বারা দেবীর পূজা করিয়া, বলিদানাদি, হোমাদি সম্পন্ন করিবে ।যারা অম্বুবাচি নিবৃত্তির পরে গ্রহ দোষ খণ্ডন করাতে চান যোগাযোগ করুন। অম্বুবাচি উপলক্ষে পরবর্তীপর্ব গুলিতে আরো অনেক অম্বুবাচি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে আসবো।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।