পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আক্ষরিক অর্থে কালী” মানে কাল অর্থাৎ সময়। এই কলিযুগে তিন দেব-দেবীকে জাগ্রত মনে করা হয় তারা হলেন হনুমান, কালী ও ভৈরব। কালী পূজিতা হন বহু রূপে দক্ষিণা কালী, শ্মশান কালী, ভদ্র কালী ও মহাকালী আমাদের বাংলায় বেশি জনপ্রিয়।শাস্ত্রে আছে দেবী কালীর আরাধনা করলে মানুষের জীবনে জাগতিক সুখ, শান্তি,
শক্তি ও বিদ্যালাভ হয়। আবার সব গ্রহ নক্ষত্ররে অশুভ প্রভাব দূর হয় কালী কৃপায়। তাই হয়তো প্রাচীন বাংলার রাজা বা জমিদাররা কালী পুজোয়
বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এমনই এক প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক কালী পুজো রায়গঞ্জের দেবী
নগর কালী বাড়ির পুজো।
প্রায় ৫০০ বছরের সুপ্রাচীন পুজো শুরু হয়েছিলো জমিদারী আমল থেকে এবং অদ্ভূত এক রীতি
চলে আসছে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে দেবীনগর কালীবাড়িতে।এখানে সূর্যের মুখ দেখেন না দেবী। সূর্যাস্তের পর দেবীর চক্ষুদান ও পুজো হয় এবং সূর্যোদয়ের আগেই প্রতিমা বিসর্জন হয়।
শোনা যায় এই এলাকা আগে জঙ্গলে ঢাকা ছিল। এখন যেখানে মন্দির তার পিছনে শ্মশান ছিল সেই সময়ে।সেই শ্মশানে দেবী কালীর একটি ছোট্ট তবে সুন্দর মন্দির ছিল। আগে ডাকাতরা ওই থানে কালীপুজো করে ডাকাতি করতে যেত। মাঝে সাঝে কিছু তান্ত্রিক বা কাপালিককে তন্ত্র সাধনায় বসতে দেখা যেতো এই স্থানে।
অদ্ভুত একটি ঘটনা আজও লোক মুখে শোনা যায়।একদিন ঘোড়ার গাড়িতে করে কালী থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজা নাথ রায় বাহাদুর। আচমকাই মহারাজের গাড়ির চাকা আটকে যায়। শত চেষ্টাতেও গাড়ি এগোয়নি। সেদিন রাতে এখানেই রাত কাটান মহারাজ গিরিজা নাথ রায় বাহাদুর। সেই রাতে দেবী কালী রাজাকে এই স্থানে পুজো করার জন্য স্বপ্নাদেশ দেন।স্বপ্নাদেশে দেবী জানিয়েছিলেন, ‘আমার মাথার উপর ছাদ দিবি না। আমি রোদে পুড়ব, জলে ভিজব। আমি সূর্যের মুখ দেখব না। একদিনেই আমার মূর্তি গড়ে পুজো এবং বিসর্জন হবে।’
দেবীর সেই আদেশ মতো ছাদহীন মন্দির নির্মাণ করেন মহারাজা গিরিজা নাথ রায় বাহাদুর। তারপর দীপান্বিতা কালীপুজোর দিন মহারাজার হাত দিয়েই এই মন্দিরের পুজো শুরু হয়।
দেবীর আদেশ মেনেই এখানে কালীপুজোর দিন সকালে মূর্তি তৈরি হয়। সূর্যাস্তের পর দেবীর চক্ষুদান করে রাতে পুজো হয় এবং পরদিন সূর্যোদয়ের আগেই ভোররাতে নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
এমন কতো রহস্য ময় মন্দির রয়েছে বাংলার সর্বত্র
আগামী পর্বে আবার নতুন দেবী মহাত্ম বর্ণনা হবে।
সামনেই অম্বুবাচি এবং অমাবস্যা। তন্ত্র মতে যারা গ্রহ দোষ খণ্ডন করাতে চান এখন থেকেই যোগাযোগ করুন। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।