বিশেষ পর্ব – জগন্নাথদেবের স্নান যাত্রা

130

প্রতিবছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে শুরু হয় চন্দনযাত্রা উৎসব এই সময়ে প্রভু জগন্নাথের শরীরে চন্দনের প্রলেপ দেয়া হয় এবং তারপর দেবস্নানা পূর্ণিমা তিথিতেই পালিত হয় মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের স্নানের উৎসব আগামী চার তারিখ অর্থাৎ রবিবার এই বছরের স্নান যাত্রার উৎসব পালিত হবে।প্রতিবারের মতো এবারও আমার গৃহ মন্দিরে পালিত হবে স্নান যাত্রা উপলক্ষে প্রভু জগন্নাথের বিশেষ পুজো। যার সরাসরি সম্প্রচার আপনারা দেখেতে পাবেন আমার সোশ্যাল মিডিয়া পেজে।আজ স্নান যাত্রা উপলক্ষে এই বিশেষ পর্বে জগতের নাথ জগন্নাথে স্নান যাত্রা ও তার গজ বেশ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ইতিহাস আপনাদের জানাবো।দুটি বিশেষ উপাচার ও থাকবে যা আপনারা পালন করে জগন্নাথ কৃপা লাভ করতে পারেন।স্নান যাত্রার উল্লেখ স্কন্দপুরানে আছে। শাস্ত্র মতে পুরীর মন্দির প্রতিষ্ঠার পর পুরি নরেশ ইন্দ্রদ্যুম্নএই অনুষ্ঠান শুরু করেন। যে পূর্ণিমা তিথিতে স্নান যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় তাকে বলা হয় দেব স্নান পূর্ণিমা। এই দেবস্নান পূর্ণিমা আবার জগন্নাথদেবের আবির্ভাব তিথি । জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং মদনমোহনের বিগ্রহ শোভাযাত্রা সহকারে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে পবিত্র স্নানবেদীতে আনা হয় তারপর একশো আট কলস জলে বিগ্রহ স্নান করানো হয়।শুধুমাত্র জগন্নাথ দেবেকে স্নান করানোর জন্য পুরীতে রয়েছে সোনাকুয়া নামের এক বিশেষ ধরনের কুয়া। শোনা যায় এই কুয়াতে নাকি কখনো সুর্যের আলো পড়েনা। স্নানপর্বের পর বিগ্রহ সাজানো হয় গজবেশে।এই গজবেশের ও একটি ইতিহাস আছেবহু শতক আগে পুরীর রাজার রাজদরবারে এসেছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত গণেশ ভট্ট।পুরীর রাজা তাঁকে জহগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা দেখবার জন্য আহ্বান জানান। তবে তা দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলনা গনেশ ভট্টর। কারণ তাঁর আরাধ্য দেবতা ছিলেন গণপতি।কিন্তু স্নানযাত্রায় গিয়ে গণেশ ভট্ট জগন্নাথকে গণেশ রূপেই দেখতে পান।প্রভু জগন্নাথের মায়ায় তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। মনে করা হয় ভক্তের মনবাসনা পূর্ণ করতে স্বয়ং জগন্নাথ গজ বেসে তাকে দেখা দিয়েছিলেন।শাস্ত্র মতে স্নান যাত্রার সময়ে জগন্নাথ দর্শন করলে সব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় স্নানযাত্রার পরে শুরু হয় অনসর সেই সময়ে অসুস্থতার কারণে ভক্তগণের অন্তরালে গোপন স্থানে চিকিৎসাধীন থাকেন তিনি স্বেচ্ছায় তিনি গৃহবন্দি হন রাজ বৈদ্যরা বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ঔষধদ্বারা তার সেবা সুশ্রশা করেন। এই সময়ে জগতের নাথ প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হন এমনকি তাকে উষ্ণতা দেয়ার জন্য কম্বল চাপা দিয়ে রাখা হয়।তারপর সুস্থ হয়ে রথযাত্রার দিন রাজবেশে সামনে আসেন জগতের নাথ জগন্নাথ।অক্ষয় তৃতীয়ায় চন্দন যাত্রার মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া উৎসব শেষ হয় রথ যাত্রায় রাজ বেশে প্রভু জগন্নাথের মন্দিরে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে।যদি সম্ভব হয় স্নান যাত্রা থেকে রথযাত্রার দিন পর্যন্ত জগন্নাথ ব্রত করুন বাড়িতে নারায়ণ থাকলে তার সামনেও এই ব্রত পালন করতে পারেন। একটি পেতলের বাটিতে একটু আতপ চাল, দুটো কাঁচা হলুদ এবং ১ টাকার একটি কয়েন দিন। এরপর এই বাটিটি জগন্নাথ বা নারায়ণ মূর্তির সামনে রেখে দিন। উল্টো রথের শেষ লগ্নে এই বাটিটি তুলে নিন এবং বাটিতে থাকা উপাদান কোনও মন্দির বা ভিক্ষুককে দান করলেই ব্রত সম্পন্ন হবে এবং মনস্কামনা পূরণ হবে।পাশাপাশি ১০৮টি তুলসী পাতা দিয়ে মালা তৈরী করুন এবং ওই মালা মালা স্নান যাত্রার দিন জগন্নাথদেবের গলায় পরিয়ে দিতে হবে এবং গঙ্গা জল নিবেদন করতে হবে তাহলেও অশেষ পুন্য সঞ্চয় করবেন।আমার গৃহ মন্দিরে স্বমহিমায় বিরাজ করছেন প্রভু জগন্নাথ। চন্দন যাত্রা থেকে রথ যাত্রা পর্যন্ত সবগুলি শাস্ত্রীয় উপাচার নিষ্ঠা সহকারে নিখুঁত ভাবে পালিত হয়। দেখেত এবং জানতে হলে চোখ রাখুন আমার পেজে। ফিরে আসবো দেবী মাহাত্ম নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।