তেহট্টর কাছে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এক ছোট্ট গ্রাম ইলশেমারিতে আছে এক অদ্ভুত মন্দির যে মন্দিরে কালী নয় দূর্গা নয় বা দেবীর কোনো পরিচিত রূপের পুজো হয়না তার বদলে পুজো হয় এক বৃদ্ধার মূর্তির। স্থানীয় দের কাছে
তিনি পরম শ্রদ্ধার বুড়িমা। কিন্তু কে এই বুড়ি মা আর কেনই বা তার পুজো করেন স্থানীয়রা? সেই কথাই বলবো আজকের মন্দির রহস্য পর্বে।
ঘটনার সূত্রপাত দেশ ভাগ পরবর্তী সময়ে।
ছিন্নমূল কিছু উদ্বাস্তু পরিবারকে ইলশেমারীতে জমি দেওয়া হয়েছিল বসবাসের জন্য।তখন এখানে জমি মানে ঘন শেওড়ার জঙ্গল।
সরকারি উদ্যোগে বেশিরভাগ জঙ্গল কেটে
ফেলে বা গাছ পালা পোড়ানো গেলেও একটি জায়গায় জঙ্গল পোড়ানো দূরের কথা গাছই কাটা যাচ্ছিল না। অনেক চেষ্টাতেও মাঝের একটু জঙ্গল না কাটতে পেরে শেষ পর্যন্ত আর গাছ কাটতে সাহস করেননি লোকজন।সেই সময় প্রথম দেখা দেন বুড়িমা। শোনা যায় রাতে ওই জঙ্গল থেকে নাকি লাঠি হাতে সেই বৃদ্ধাকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যেত মাঝে মাঝেই। কাছে গেলেই নাকি সেই মূর্তি উধাও।মনে করা হতো তিনিই ওই অরণ্য বা গাছেদের রক্ষাকতৃ। তার পর আর কেউ সেখানে গাছ কাটার চেষ্টা করেনি। শুরু হয় মানুষ ও প্রকৃতির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
সৌজন্যে বুড়িমা।প্রথম দিকে বিষম ভয় পেয়ে ওই বৃদ্ধাকে কোনও অলৌকিক দেবী বলেই ভেবে নেয় গ্রামের মানুষ। পরে সেই ভয় ভক্তিতে পরিবর্তিত হয়।মূর্তি গড়ে শুরু হয় ওই বৃদ্ধার পুজো।
পরে মন্দির ও তৈরী হয়।
গ্রামের মানুষের আশা ভরসার স্থান হয়ে ওঠে বুড়িমার মন্দির এমন ও শোনা যায় যে একটা
সময় বৃষ্টি না হওয়ায় চাষবাস বিপন্ন হলে এই বুড়িমাকে পুজো দিয়েই নাকি বৃষ্টি পেয়েছিলেন গ্রামের চাষীরা। নাহলে খরা দেখা দিতো।
জনশ্রুতি আছে এক সময় রেলওয়ের তরফ
থেকে মন্দিরটি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হলে অলৌকিক কোনো শক্তির প্রভাবে তা সম্ভব হয়নি বাধ্য হয়ে ঘুরিয়ে দিতে হয় রেলপথই। পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মন্দিরটি সংস্কারও করে দেন।
বুড়িমার মন্দির প্রাঙ্গনে বহু পুরনো একটি অশ্বত্থ গাছও রয়েছে এবং এই গাছেরও রয়েছে আলাদা ইতিহাস। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস এই অশ্বত্থ গাছ কাটলে রক্তপাত হয়। কেউ কাটার চেষ্টা করলে তার ক্ষতি হয়। তাই গাছটিও মানুষের শ্রদ্ধার বস্তু।
আগে বৃদ্ধার মৃন্ময়ী মূর্তিই পরবর্তীতে সিমেন্টের মূর্তি হয়।আজও গ্রামে বুড়িমার পুজো শেষ হলে তবেই অন্য দেব-দেবীরা পুজো পান।প্রত্যেক অমাবস্যা এবং বিশেষ বিশেষ তিথিতে বহু মানুষ এখানে আসেন বুড়িমার পুজো দেখতে এবং
তার আশীর্বাদ নিতে।স্থানীয় মানুষের কাছে
তাদের বুড়িমা সাক্ষাৎ জগৎজননী।
সামনেই ফল হারিণী অমাবস্যা।সেই উপলক্ষে
দেবী মাহাত্ম এবং মন্দির রহস্য নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা চলতে থাকবে। তবে শুধু দেবী প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা শোনা নয় দেবীর অলৌকিক উপখ্যান জানা নয় নয়।
এই তিথির গুরুত্ব তখনই সম্পূর্ণ রূপে উপলব্ধি করতে পারবেন যখন এই তিথিতে গ্রহ দোষ খণ্ডন করিয়ে জীবনের জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।ফিরে আসবো পরের পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।