দেবী মাহাত্ম- রঙ্কিনী দেবীর কথা

197

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি বিখ্যাত ছোট গল্প হলো ‘রঙ্কিণী দেবীর খড়গ’ হয়তো আপনারা অনেকেই অলৌকিক এই গল্পটির বেতার নাট্যরূপ শুনেছেন। বাস্তবেই রয়েছে এই মন্দির এবং তা অবস্থিত জামশেদপুরের কাছে এক পাহাড়ি উপত্যকায়।এই মন্দিরকে ঘিরে থাকা কিছু অলৌকিক ঘটনা বা জনশ্রুতি নিয়ে আজকের
পর্ব।

জনশ্রুতি অনুসারে মাতা রঙ্কিণী এই অঞ্চলের বনে জঙ্গলে বাস করতেন এবং তিনি এই দুর্গম অরণ্যের রক্ষাকতৃ ছিলেন।স্থানীয় আদিবাসীরা তাকে খুব মান্য করতো। তবে তার মন্দির ও মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয় অনেক পরে। শোনা যায় একবার এক স্থানীয় আদিবাসির মেয়ে সন্ধ্যার পর জঙ্গলে পথ হারায় এবং এক অপদেবতার খপ্পরে পরে। দেবী রঙ্কিনি তখন আবির্ভূত হন এবং মেয়েটিকে রক্ষা করেন।
তারপর জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে যান।সেই রাতেই ঐ মেয়েটির বাবাকে দেবী রঙ্কিণী স্বপ্নাদেশ দিয়ে দেবীর একটি মন্দির তৈরি করতে বলেন।

মন্দির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে এই জনশ্রুতি প্রচলিত থাকলেও ঠিক কোন সময়ে মূল মন্দিরটি তৈরি হয়েছে তা জানা যায়না । তবে মন্দিরের বর্তমান যে রূপ আমরা দেখতে পাই, তা তৈরি হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর । অনেকের কাছে মা রঙ্কিনী দেবী কালীর একটি রূপ আবার পূর্ব ভারতের বিভিন্ন উপজাতির কাছে তিনি তাদের আরাধ্যা দেবী।

ঘাটশিলায় বসবাস করার সময়ে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় এই মন্দির সম্পর্কে জানেন ও দেবী রঙ্কিনী সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন
প্রসঙ্গত বলে রাখি ঘাট শিলায় শ্রদ্ধেয় বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের বাসস্থান আজও তার স্মৃতি বহন করে চলেছে।

যাই হোক আবার দেবী রঙ্কিনীর প্রসঙ্গে ফেরা যাক। শোনা যায় এই মন্দির থেকে কেউ আজ অবধি খালি হাতে ফেরেনি। মা রঙ্কিনী সকলের মনস্কামনা পূর্ণ করেছেন। পাহাড়ি দুর্গম রাস্তা দিয়ে পৌছাতে হয় দেবীর মন্দিরে।মন্দিরের গর্ভগৃহে কোনো মূর্তি নেই। একটি পাথরকে দেবীরূপে পূজা করা হয়।মূল মন্দিরের দুই পাশে রয়েছে আরও দুটো মন্দির। ডানপাশে রয়েছে শিবমন্দির এবং বামপাশের মন্দিরে রয়েছে গণেশের মূর্তি।

প্রায় রোজই অসংখ্য তীর্থ যাত্রী এখানে আসেন পুজো দেন। নিজেদের মনোস্কামনা জানান এবং সর্বোপরি দেবী রঙ্কিনি ও তার মন্দির দর্শন করে ধন্য হন।

ফিরে আসবো আরো এমন সব অজানা ও রহস্যময় মন্দিরের কথা ও দেবী মাহাত্ম নিয়ে আলোচনায়। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।