দশ অবতার রহস্য – কুর্ম অবতার 

533

ভগবানে বিষ্ণুর কুর্ম অবতারের আবির্ভাব নিয়ে দুটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা আছে|দুটোই আজ সংক্ষেপে আপনাদের বলবো|প্রথম ব্যাখ্যা অনুসারে পাতালবাসী অসুরেরা একবার দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গরাজ্য দখল করে । তখন ব্রহ্মদেব ও ইন্দ্র নিপীড়িত দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রীবিষ্ণুর কাছে গেলেন । অসুরদের অত্যাচারের কথা বললেন । শ্রীবিষ্ণু দেবতাদেরকে অসুরদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষিরােদ সাগর মন্থনের পরামর্শ দিলেন । তিনি বললেন , সাগর মন্থনের ফলে যে অমৃত উঠে আসবে , তা পান করে দেবতাগণ অসুরদের পরাজিত করার শক্তি ফিরে পাবেন|দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অনুসারে দুর্বাশা মুনির দেয়া মালা ইন্দ্রের ঐরবত দ্বারা অবহেলিত হওয়ায় রেগে গেলেন দুর্বাশা মুনি এবং ইন্দ্র কে অভিশাপ দিলেন দেবতারা তাদের শক্তি হারাবে, শ্রীহীন হয়ে যাবে এই স্বর্গরাজ্য।শ্রীহীন, সৌন্দর্য্যহীন, লক্ষ্মীহীন হয়ে পড়বে স্বর্গ।উপায় না দেখতে পেয়ে সমস্ত দেবতাগণ প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন|প্রজাপতি বললেন সমুদ্র মন্থন করে অমৃতকে বের করে নিয়ে আস্তে হবে।কিন্তু দেবতাদের একার পক্ষে সমুদ্র মন্থন করা সম্ভব নয়।অমৃতের সমান বন্টনে ঠিক করা হয় দেব-অসুর উভয় মিলে সমুদ্র মন্থন করবে।দুটি ক্ষেত্রেই সমুদ্র মন্থনের কথা বলা হয়|ভগবান বিষ্ণু এই সমুদ্র মন্থনের কাজ সুসম্পন্ন করার জন্য এক বিরাট কচ্ছপের অবতারে আবির্ভুত হয়েছিলেন।যা তার কূর্ম অবতার রূপে জগৎ বিখ্যাত ।তার ওই বিরাট পৃষ্ঠদেশের ওপরে তিনি সমুদ্রমন্থনের সময় মন্দার পর্বতকে ধরে রাখেন।বাসুকি নাগ কে ব্যবহার করা হয় মন্থনের রজ্জু বা দড়ি রূপে|তারপর একে একে বিষ্ণুদেবের রাগিনী শক্তি অর্থাৎ পরমাপ্রকৃতি শ্রীলক্ষ্মী উঠে এলেন।বাসুকী নাগের শরীর মন্দার পর্বতে ঘর্ষণের ফলে যে বিষ উঠে এসেছিলো তা স্বয়ং মহাদেব পান করেছিলেন এবং নীলকণ্ঠ হয়ে সারা জগৎকে এই বিষের প্রভাব থেকে রক্ষা করেছিলেন।তৎপরবর্তীতে ধন্বন্তরি আবির্ভুত হয়েছিলেন অমৃত ভাণ্ড নিয়ে।সেযাত্রায় অমৃত পান করে দেবতারা রক্ষা পেয়েছিল অসুর দের হাত থেকে|জ্যোতিষ শাস্ত্রে এই কঠিন কর্মের সাথে শনিদেবের সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। কূর্ম অবতারের বন্দনায় গ্রহ রাজ শনিগ্রহের শুভ ফল প্রাপ্ত হয়।হিন্দুধর্মে কূর্ম হল বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার|মৎস অবতারের মত এটিও সত্যযুগের অবতার ।শ্রী বিষ্ণুর কূর্ম অবতারের জন্য উৎসর্গীকৃত মন্দির হল অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলার কুর্মাই মন্দির তাছাড়া শ্রীকুর্মাম মন্দির ও বেশ জনপ্রিয়|যথা রীতি আগামী পর্বে ভগবানেরপরবর্তী অবতার এবং তার বিশেষ লীলা নিয়ে ঠিক সময়ে ফিরে আসবো|চলতে থাকবে এই পৌরাণিক আলোচনা|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|