দীপান্বিতা অমাবস্যা তন্ত্র ও জ্যোতিষ শাস্ত্র

460

সারা দেশের তান্ত্রিক জ্যোতিষী সহ অসংখ্য সাধারন মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন যে বিশেষ তিথি গুলির জন্য তার মধ্যে একটি দীপান্বিতা অমাবস্যা|অপেক্ষার কারন এই বিশেষ তিথিতে সাধনা করে একদিকে যেমন সিদ্ধি লাভ করেন সাধকরা তার পাশাপাশি বহু সাধারন মানুষ দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে নিজের জন্ম ছকে থাকা অশুভ গ্রহের প্রতিকার করিয়ে জীবনের নানা জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পান|কেনো এই তিথিতেই গ্রহ দোষ খণ্ডন এতো কার্যকরী তা জানতে হলে তন্ত্র সম্পর্কে জানতে হবে|শাস্ত্র মতে সতী বা দেবি দূর্গার দশ হাতে আছেন দশ মহাবিদ্যা । এই দশমহাবিদ্যার উপর ভিত্তি করেই অনেকটা তন্তশাস্ত্র গড়ে উঠেছে । তন্ত্রের বিষয়টা অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত । সাধারনভাবে বলা যায় তন্ত্র অসীম জ্ঞানের আধার এবং উৎস|তন্ত্র- ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু গভীর তার অন্তর্নিহিত অর্থ। তন্ত্র হল এক বৃহৎ ও অতিপ্রাচীন গুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় বিষয়। মুক্ত বিশ্বকোষে বলা আছে, তন্ত্র হিন্দুসমাজে প্রচলিত ঈশ্বর উপাসনার একটি পথবিশেষ|তন্ত্রে যেসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতির বর্ণনা রয়েছে তার উদ্দেশ্যই হল মানুষকে অজ্ঞানতার অন্ধকারথেকে রক্ষা করে আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটানো ও সুপ্ত অলৌকিক শক্তির বিকাশের মাধ্যমে জগতের কল্যাণ করা|তন্ত্রের প্রচলিত বহু রীতি নীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল বহু প্রাচীন|আছে কিছু ভুল ভ্রান্তি ও অপব্যাখ্যা|তবে এ কথা এক বাক্যে স্বীকার করতে হয় মাতৃ শক্তির আরাধনার যতগুলো পন্থা আছে তন্ত্র তার মধ্যে প্রধান|দীপান্বিতা অমাবস্যা এই তন্ত্র সাধনা বা শাস্ত্র মতে গ্রহের প্রতিকারের শ্রেষ্ট তিথি|মহালয়া অর্থাৎ পিতৃপক্ষের অবসান এবং মাতৃপক্ষের শুভারম্ভ। এই সময় বিদেহী আত্মারা জল গ্রহণের জন্য মর্ত্যে আসেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, তাঁরা দীপাবলি পর্যন্ত মর্ত্যেই থাকেন।দীপাবলির অমাবস্যা তিথিতে ফের আত্মারা ফিরে যান স্বর্গলোকে। অন্ধকারে যাতে পিতৃপুরুষদের ফিরে যেতে কোনও অসুবিধা না হয়, তাই তাঁদের পথ আলোকিত করে রাখতেই ঘরে ঘরে জ্বালানো হয় প্রদীপ।তন্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের ক্ষেত্রে মন্ত্র শক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এক্ষেত্রে বৈদিক মন্ত্র, স্তোত্র মন্ত্র এবং বীজ মন্ত্র তিনটি সঠিক ভাবে শাস্ত্র সম্মত পদ্ধতিতে ব্যবহিত হয়|সেক্ষেত্রে তিথি নক্ষত্র বড়ো ভূমিকা নেয় এবং দীপান্বিতা অমাবস্যা শাস্ত্র মতে গ্রহদোষ খন্ডনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তিথি বললেও হয়|বাংলায় কালী পুজোর প্রচলনে তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগিশ এর অবদান নিয়ে আগেই বলেছি তবে বাংলায়, কালীপুজো মূলত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমলে। উনিশ শতকে কৃষ্ণচন্দ্রেরই পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার গুটিকয়েক জমিদারের হাত ধরে কালীপুজোর জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়।দীপান্বিতা তারাপীঠে অমাবস্যা উপলক্ষ্যে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়|তার আগে ভোরে স্নানের পর দেবীর শিলাব্রহ্মময়ী মূর্তিকে রাজবেশে সাজিয়ে তোলা হয়। তারপর মঙ্গলারতি। এরপর দুপুরে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগের শেষে ভৈরবকে স্নান করানো হয় ৮০ কেজি দুধ দিয়ে। সন্ধেয় সন্ধ্যারতি। রাতে বিশেষ নিশিপুজোর আয়োজন করা হয়েছে। তারাপীঠে তারা মায়ের আরাধনা হয় তন্ত্রমতে। কথিত আছে, একবার দেবীর মাতৃরূপ দর্শন চান বশিষ্ঠ মুনি ৷ দেবীও নিরাশ করেননি ৷ মাতৃরূপে দর্শন দেন দেবী। এখানেই তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেন তারামায়ের ভক্ত বামাক্ষ্যাপা ফলে এটি সিদ্ধ পীঠ হিসেবেও পরিচিত।আগামী চব্বিশ তারিখ দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে আমি থাকবো তারাপীঠে|গৃহ মন্দির এবং তারাপীঠে দুই স্থানেই শাস্ত্র মতে গ্রহের প্রতিকার করে যেকোনো গ্রহগত সমস্যার নিশ্চিত ও স্থায়ী সমাধান পেতে যোগাযোগ করুন|আগামী দিনে ধনতেরাস ও কালী কথা নিয়ে পুনরায় ফিরে আসবো যথা সময়ে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|