বাঙালীদের কাছে দীপাবলি এক দিনের কালী পুজো হলেও শাস্ত্র মতে দীপাবলী মূলত পাঁচ দিনের উত্সব যা পালিত হয় দেশের বহু জায়গায়| এর আর এক নাম আছে— ধনাত্রয়োদশী ‘ধন’ শব্দের মানে সম্পত্তি। ত্রয়োদশী শব্দের অর্থ হিন্দু ক্যালেন্ডার এর ১৩তম দিন। দীপাবলীর সময় লক্ষ্মীপুজোর দিন দুই আগে ধনতেরাস উৎসব পালিত হয়|আগামী কাল সেই ধনতেরাস উৎসব|ধনতেরাস উৎসবের সাথে জড়িয়ে রয়েছে এক পৌরাণিক গল্প|পুরাকালে ভারত বর্ষে হিমার নামে এক রাজা ছিলেন|কথিত আছে, রাজা হিমার ১৬ বছরের ছেলের এক অভিশাপ ছিল। তার কুষ্টিতে লেখা ছিল, বিয়ের চার দিনের মাথায় সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হবে। তার স্ত্রীও জানত সেই কথা। তাই সেই অভিশপ্ত দিনে সে তার স্বামীকে সে দিন ঘুমোতে দেয়নি। শোয়ার ঘরের বাইরে সে সমস্ত গয়না ও সোনা-রূপার মুদ্রা জড়ো করে রাখে। সেই সঙ্গে সারা ঘরে বাতি জ্বালিয়ে দেয়। স্বামীকে জাগিয়ে রাখতে সে সারারাত তাকে গল্প শোনায়, গান শোনায়। পরের দিন যখন মৃত্যুর দেবতা যম তাদের ঘরের দরজায় আসে, আলো আর গয়নার জৌলুসে তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে যায়। রাজপুত্রের শোয়ার ঘর পর্যন্ত তিনি পৌঁছন ঠিকই। কিন্তু সোনার উপর বসে গল্প আর গান শুনেই তাঁর সময় কেটে যায়। সকালে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যান তিনি। রাজপুত্রের প্রাণ বেঁচে যায়। পরদিন সেই আনন্দে ধনতেরাস পালিত হয়|ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছে এই দিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা এ দিন দামি ধাতু কেনেন। সম্পদের দেবতা কুবেরও এ দিন পূজিত হন|ধনতেরাস উপলক্ষে যে কোনো শুভ কাজের সূচনা করা যায়|জ্যোতিষ প্রতিকার হিসেবে রত্ন ধারন হোক বা গৃহে দেব দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা কিংবা শাস্ত্র মতে গ্রহদোষ খণ্ডন|ধনতেরাস এই সব ক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠ সময়|ধনতেরসের দিন মা লক্ষ্মীর আরাধনা ছাড়াও, অনেকে কুবেরের পুজো করে থাকেন। এমন দিনে, কুবের পুজোর সময় লক্ষ্মীযন্ত্র স্থাপনা করলে বহু দারিদ্রতা কেটে যায় বলে মনে করেন অনেকে। আর এই দিন থেকে লক্ষ্মী যন্ত্র স্থাপনা করে রোজ তাকে পুজো করলে সংসারে অর্থাভাব হবে না বলে বলে মনে করা হয়|বাড়িতে শারীরিক অসুস্থতার সমস্যা দুর করতে কোনও দরিদ্রকে ধনতেরাসের দিন অন্ন দান করুন। ওই দিন ধান ও খাবার দান ভালো ফল দেয়|পাশাপাশি ধনতেরসের দিন সন্ধ্যে বেলা ১৩ টি প্রদীপ জেলে প্রদীপের সামনে ১৩ টি কড়ি রেখে মা লক্ষ্মী ও কুবেরে পুজো করলে, তা আশাতীত ফল দেয় আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রে। প্রদীপ নিভে যাওয়ার পর ওই কড়ি ঘরে যেখানে টাকা রাখা হয় সেখানে রেখে দিন|ধনতেরাসের দিন লক্ষ্মী দেবীর সামনে রুপো রেখে দিয়ে তাঁর আরাধনা করলে তিনি সন্তুষ্ট হন বলে বিশ্বাস করা হয়, বলা হয়, মা লক্ষ্মীকে ধনদেবী বলে যেহেতু পুজো করা হয়, তাই এমন দিনে, দেবীকে রুপো দিয়ে পুজো করা হলে, তা ভালো ফল দিতে পারে, এছাড়াও যদি ধনতেরাসের দিন কুবের যন্ত্র রাখা হয় বাড়িতে,তাহলে সেক্ষেত্রেও বাড়িতে দারিদ্রতা প্রবেশ করে না।আশা করি এই উপাচার গুলি পালন করে আপনার সৌভাগ্য লাভ হবে|মনে রাখবেন যেকোনো জ্যোতিষ প্রতিকার গ্রহণের ক্ষেত্রে ধনতেরাস এবং শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খন্ডনের ক্ষেত্রে দীপান্বিতা অমাবস্যা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তিথি|আগামী চব্বিশে নভেম্বর দীপান্বিতা অমাবস্যায় আমার গৃহ মন্দির ও তারাপীঠ মহা শ্মশানে একসাথে হবে বিশেষ হোম যজ্ঞ ও তন্ত্র মতে গ্রহের প্রতিকার আপনারা চাইলে এই মহা যজ্ঞে নিজের গ্রহ দোষ খণ্ডন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন|ধনতেরাস ও দীপাবলির আগাম শুভেচ্ছা জানাই |ফিরে আসবো পরের পর্বে|ভালো থাকুন|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|