বোলপুর ও শান্তিনিকেতনের অজানা ইতিহাস

1106

কলকাতার কাছাকাছি যতগুলি বেড়ানোর স্থান আছে তারমধ্যে বোলপুর আমার খুব প্ৰিয়, খুব কাছের|কারন একটি নয় অনেকগুলি, প্রথমত প্রকৃতির আদিম সৌন্দর্য এখনো কিছুটা অকৃত্রিম ভাবে উপভোগ করা যায় এই লাল মাটির দেশে, দ্বিতীয়ত রবীন্দ্রঅনুরাগী হিসেবে গুরুদেবের সৃষ্টির কাছাকাছি আসতে হলে আসতেই বোলপুরে|আরেকটি কারন ও আছে তা হলো বোলপুর লাগোয়া কঙ্কালী তলা মন্দিরের সাথে আমার পেশাগত সম্পর্ক বহু দিনের আর তারাপীঠে ও খুব বেশি দুরে নয়|যদিও এবার ঠিক ঘুরতে আসা নয়, বোলপুর আসার আসল কারন চেম্বারে ক্লাইন্ট দের সাথে সাক্ষাৎ, তাদের সমস্যা শোনা ও যথা সাধ্য সমাধানের পথ খোঁজা|তবুও এই শীতের মরসুমে শহর ছেড়ে বের হওয়া মানে এক প্রকার বেড়ানোই বলা যায়|তাই এই কাজের বেড়ানোর কিছু উপলব্ধি বা অতীত অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিই আপনাদের সাথে|

বোলপুরের দর্শনীয় স্থান মানেই শুধু গুরুদেবের আশ্রম নয়| সেই সঙ্গে খোয়াই হাট, কোপাই পার, বিশ্ববাংলা হাটের চাতাল, সোনাঝুরির লাল ধুলো, আমার কুঠিরের কাঁকরের উঠোন খানি। সৃজনী গ্রামের বহুমুখী রূপ, রায়পুর জমিদার বাড়ির ইটের পাঁজরের ইতিহাস, লাল বাঁধের লাবণ্য, ডিয়ার পার্কের চঞ্চল হরিণের দল , ডোঙালি কালি মন্দিরের সন্ধ্যা, কঙ্কালী তলার পবিত্রতা, সবুজ বনের সজীবতা আর উড ফসিল পার্কের অতীতকে খুঁজে দেখাই হল বোলপুর ভ্রমণের সার্থকতা|

বোলপুরের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে বোলপুর থেকে কিলোমিটার তিনেক দূরে অজয় নদীর তীরে একটি ঐতিহাসিক জনপদ ছিলো সুপুর। মার্কণ্ডেয় পুরাণ বলছে, বাংলায় প্রথম বসন্তকালীন দুর্গাপুজার প্রচলন করেন এই সুপুর রাজ্যের এক রাজা সুরথ। তখন গ্রামদেবী ভগবতী শিবিক্ষা। তাঁকে তুষ্ট করতে লক্ষাধিক বলি দিয়েছিলেন সুরথ। সুপুরের শিবিক্ষা মন্দির থেকে ডাঙ্গালি কালিতলা অবধি নাকি হয়েছিল সেই বলি। এরপর থেকেই ডাঙ্গালি কালিতলা ও তার আশপাশের অঞ্চলের নাম হয়ে যায় ‘বলিপুর’। সেই বলিপুরই নাকি আজকের বোলপুর।

শাম্তি নিকেতনের ও নিজস্ব ইতিহাস আছে|নামকরনের ও আলাদা গল্প আছে|আদিতে শান্তিনিকেতনের নাম ছিল ভুবনডাঙা। জমিদার ভুবন সিংহের নামানুসারে এই নাম। এই সিংহ পরিবারের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। একবার তিনি নিমন্ত্রণ রক্ষায় সেখানে গেলে ভুবনডাঙায় রাত হয়ে যায়। দৈবক্রমে সেদিন ছিল জ্যোৎস্নারাত। মাঠের মধ্যে ছিল কতগুলো ছাতিমগাছ। অপূর্ব সেই দৃশ্য। এই নৈসর্গিক দৃশ্যে অভিভূত হয়ে তিনি ভুবনডাঙার প্রেমে পড়ে যান। ১৮৬৩ সালের ৩১ মার্চ তিনি কুড়ি বিঘা জমি পাঁচ টাকায় পাট্টা নিলেন জমিদার ভুবন সিংহের কাছ থেকে। ছাতিমতলাতেই তিনি গড়ে তোলেন এক আশ্রম। পাশে একটি বাড়ি, যার নাম ‘শান্তিনিকেতন’! কালের প্রবাহে ভুবনডাঙা থেকে এলাকাটির নাম হয়ে যায় শান্তিনিকেতন! অনেকে অবশ্যই মনে করেন স্থানীয় দস্যু ভুবন সর্দারের নামে নাম হয়েছিল ভুবন ডাঙ্গার মাঠ|এই তথ্যর সপক্ষে অবশ্য তেমন কোনো প্রমান পাওয়া যায়না|

আপাতত এই পর্বে বোলপুর শাম্তি নিকেতন নিয়ে এতোটুকুই|থাকছি আজ বোলপুর চেম্বারে|জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা হোক বা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা|প্রয়োজনে আসতেই পারেন|ফোন করে নেবেন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ