বহুবার এসেছি বীরভূমে, ঠিক কতোবার যে এসেছি তার কোনো হিসেব নেই হয়তো,কখনো তন্ত্র সাধনার কোনো বিশেষ তিথিতে এসেছি বিশেষ হোম যজ্ঞ বা গ্রহ দোষ খণ্ডনের কাজ নিয়ে কখনো চেম্বার করতে কখনো নিছক তীর্থ যাত্রায়, তবে যতবার এসেছি এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক শান্তি পেয়েছি, রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়েছে কারন একমাত্র পশ্চিমবঙ্গর বীরভূমই এমন স্থান যেখানে এক জেলাতে পাঁচটি সতীপীঠের রয়েছে। লাল মাটির দেশ বীরভূমকে তাই বলা চলে মা কালীর চারণভূমি।আজ আবার এলাম প্রধান উদ্দেশ্য অবশ্যই চেম্বারে জ্যোতিষ চর্চা ও মানুষের সমস্যার সমাধান দেয়া|তার মাঝেই বীরভূমের পাঁচটি সতী পীঠ গুলি নিয়ে একটি প্রতিবেদন আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি|
নলাটেশ্বরী দিয়ে শুরু করছি, বীরভূমের নলহাটি স্টেশনের নিকটবর্তী এই স্থানে দেবী পার্বতীর কন্ঠনালী পড়েছিল। সেই থেকে এই এই পিঠের নাম নলাটেশ্বরী।একটি ছোট টিলার উপরে গড়ে উঠেছে মা নলাটেশ্বরী মন্দির, যা একসময় ঢাকা ছিল ঘন জঙ্গলে। এই মন্দিরের মা আমিষাশী। বছরের ৩৬৫ দিনেই এখানে মা-কে অন্ন ভোগ দেওয়া হয়। লোক মুখে প্রচারিত, কামদেব স্বপ্নাদেশে সতীরী কন্ঠনালী উদ্ধার করেন। দেবী এখানে ত্রিনয়নী কালিকা রূপে পূজিত হন। এই সতীপীঠের নামানুসারেই জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছে নলহাটি।
এরপরই নন্দীকেশ্বরী মন্দির। সতীর কন্ঠ হার পড়েছিল এখানে। সতী এখানে পূজিত হন নন্দিনী রূপে এবং মন্দিরে অবস্থিত ভৈরব এখানে পূজিত হন নন্দীকেশ্বর রূপে। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সাধক বামাক্ষ্যাপার সিদ্ধিলাভের কাহিনীও। পুরাণ মতে, সাধক বামাক্ষ্যাপা যখন তারাপীঠে সাধনা করছিলেন, একদিন তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন মা নন্দীকেশ্বরী। তাঁকে আদেশ দেওয়া হয়, একমাত্র এই রূপে মা-কে পুজো করলেই সিদ্ধিলাভ হবে।
সারা বিশ্বের ৫১ সতী পীঠের অন্যতম বীরভূমের বক্রেশ্বর। ঋষি অষ্টবক্র মুনির নামানুসারে এই জায়গার নাম হয় বক্রেশ্বর। সতীর দুই ভ্রু-র মধ্যস্থল অর্থাৎ মন পড়েছিল এখানে। মা এখানে মহিষমর্দিনী দুর্গা রূপে পুজিত হন
বীরভূমেই রয়েছে ৫১ সতী পীঠের অন্যতম ফুল্লোরা সতীপীঠ, লাভপুরে অবস্থিত। এখানে সতীর অধঃওষ্ঠ বা ঠোঁট পড়েছিল। এখানে দেবী, ফুল্লোরা রূপে ও ভৈরব বিশ্বশ্বর রূপে পূজিত হন। তবে দেবী ফুল্লোরার কোনো বিদ্রোহ নেই এই মন্দিরে। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে টকটকে লাল রঙের বড় একটি পাথরের খন্ড। সেই পাথরের সামনের ভাগটা ওষ্ঠাকৃতির।বশিষ্ট মুনির পুত্র অট্টহাস ছিলেন এই সতীপীঠের প্রথম সাধক এবং তাঁর নামানুসারেই জায়গাটির তৎকালীন নাম ছিল অট্টহাস
সতীপীঠের শেষ পীঠ কংকালীতলা পুরাণ মতে, দেবীর কাঁকাল বা কোমরের কংকাল এই স্থানে পড়েছিল। যার ফলে এখানকার নাম কংকালীতলা। এছাড়াও এই মন্দিরে দেবী, দেবগর্ভা হিসেবে পূজিত হন। এখানে কোনও মাতৃ বিগ্রহ বা প্রতিমা নেই। কংকালী মায়ের ছবিতেই পুজো করা হয় এখানে। কংকালীতলা মন্দিরের পাশেই রয়েছে পাড় বাঁধানো ছোট পুকুর, যার চারিদিকে সিঁড়ি নেমে গেছে জলে। এটাই আসল সতীকুণ্ড। যার মধ্যে সতীর কাঁকাল পড়েছিল।
আগামী পর্বে লিখবো তারাপীঠের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কিছু গুরুত্ব পূর্ণ কথা তার পাশাপাশি থাকবে বোলপুরের ইতিহাস নিয়ে কিছু তথ্য|পড়তে থাকুন|জানিয়ে রাখি তিন ও চার তারিখ থাকছি যথাক্রমে তারাপীঠে ও বোলপুরে|যারা চেম্বারে আসতে চান ভাগ্য বিচার ও জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে|নির্দ্বিধায় উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করতে পারেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|