ইতিমধ্যে এর আগের পর্ব গুলিতে আমি তিনটি জ্যোতির্লিঙ্গর কথা লিখেছি অর্থাৎ সোমনাথ, বৈদ্যনাথ ও রামেশ্বরম|আজ বলবো আমার অন্যতম প্ৰিয় একটি তীর্থক্ষেত্র ও দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম কেদারনাথ এর কথা|তবে ধন্যবাদ জানাই আমার সব দর্শক, অনুরাগী ও পাঠক দের যাদের উৎসাহে ও সমর্থনে আমার প্রতিটি অনুষ্ঠান ও আধ্যাত্মিক লেখা এক অন্য মাত্রা পায়|আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি আজকের পর্ব “কেদারনাথ ” কথা দিচ্ছি ভালো লাগবেই আপনাদের|
উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল জেলায়,হিমালয়ের পাদদেশে,কেদার পর্বতের নিচে সমুদ্রস্পৃষ্ট থেকে 3584 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই কেদারনাথ মন্দির|মন্দিরের কিছু দুর দিয়ে বয়ে গেছে মন্দাকিনী নদী|পঞ্চ কেদারের অন্যতম এই প্রাচীন তীর্থের জন্ম লগ্নের রহস্য জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে হাজার হাজার বছর আগে মহাভারতের সময় কালে|
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জিতে ছিলো পান্ডবরা কিন্তু বহু স্বজন কে হত্যা করতে হয়েছিলো যুদ্ধ ক্ষেত্রে,যুদ্ধ শেষে সেই পাপ থেকে মুক্তি পেতে পান্ডবরা শিবের শরণাপন্ন হন কিন্তু শিব তাদের ক্ষমা করতে প্রস্তুত ছিলেন না তাই তিনি একটি ষাঁড় এর রূপ ধরে গা ঢাকা দেন |কিছুকাল অনুসন্ধান চালানোর পর পান্ডব রা তার স্বরূপ চিনতে পারেন ও ভীম বহু চেষ্টার পর ষাঁড়রুপি শিব কে ধরে ফেলেন তখন শিব বাধ্য হয়ে নিজ মূর্তিতে আবির্ভুত হন, এই আবির্ভাবের মুহূর্তে ষাঁড়রুপি শিবের শরীরের যে অংশ যেখানে অবস্থান করছিলো সেখানে একটি করে সৃষ্টি হয় যেমন মাথা পশুপতি নাথে, বাহু তুঙ্গ নাথে,মুখ রূদ্রনাথে,নাভি মধ্য মহেশ্বরে চুল জল্পেশ্বরে ও পৃষ্ঠদেশ কেদারনাথে|এই পাঁচ টি মন্দির কে একত্রে পঞ্চকেদার ও বলা হয় |
আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দুদিক থেকেই কেদারনাথ অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় এক তীৰ্থস্থান|মনে করা করা হয় শিব স্বয়ং বাস করেন এখানে, তার এটি অত্যন্ত প্ৰিয় স্থান|স্কন্দ পুরান অনুসারে কেদারনাথ এর এই পবিত্র স্থানেই শিব তার জটা থেকে মুক্ত করে ছিলো গঙ্গাকে|দেবাদিদেব এখানে পূজিত হন কেদার হিসেবে|প্রাচীন কালে এই অঞ্চলের নাম ছিলো কেদারখন্ড|
স্বাভাবিক ভাবেই আদি কেদারনাথ মন্দির প্রকৃতপক্ষে কবে নির্মাণ হয়েছিলো তার কোনো নিদ্দিষ্ট নথি নেই|মন্দির প্রাঙ্গনে আছে বিশালাকার নন্দীর মূর্তি, অভ্যন্তরে কৃষ্ণ ও স্বস্ত্রীক পঞ্চ পাণ্ডবের মূর্তি খোদাই করা আছে|ত্রিকোণাকৃতি জ্যোতির্লিঙ্গ টি রয়েছে মুলমন্দিরের এক বিশেষ গর্ভগৃহে|মনে করা হয় এক হাজার বছর আগে আদি শংকরাচার্য মন্দিরটির সংস্কার করেন ও বদ্রিনাথের পূজারী কে এনে কেদারে পূজার প্রচলন করেন|তার আগে কেদারনাথ এ কোনো নিদ্দিষ্ট পূজারী ছিলো না, পরে পাঁচ জন পূজারী নিয়োগ করা হয়, যে পরম্পরা আজও চলছে|
চারপাশে তুষার ঢাকা পর্বত মাঝ খানে কেদারনাথ মন্দির এক অপূর্ব অনুভূতি জাগায় মনে|একাধিক বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েও আশ্চর্য ভাবে প্রতিবার রক্ষা পেয়েছে মুল মন্দিরটি|এক কালে অতি কষ্ট সাধ্য ছিলো এই মন্দির দর্শন কারন প্রতিকূল পরিবেশ ও দুর্গম পথ|তবুও সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে বাবার ভক্ত রা দলে দলে ছুটে আসতেন কেদারনাথ দর্শনে|আজও আসেন |কেদারনাথ ভারতের চারধাম তীর্থের মধ্যে অন্যতম|এই অঞ্চলের তীব্র শীতের ও প্রতিকূল পরিবেশের জন্য মন্দিরটি কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি দর্শনার্থী দের জন্য খোলা থাকে। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয় মাসের জন্য উখিমঠে নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়|পরে আবার নিদ্দিষ্ট সময়ে মূর্তিগুলি কেদারনাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়|যুগ যুগ ধরে এই পরম্পরা চলে আসছে|
আজ এই বিশেষ জ্যোতির্লিঙ্গ কেদারনাথ নিয়ে এটুকুই,ফিরে আসবো পরের পর্বে, জ্যোতিষ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান গুলি দেখতে থাকুন আর চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|অনলাইনে ও চেম্বারে দুভাবেই আমি আছি আপনাদের পাসে|ধন্যবাদ|ওঁম নমঃ শিবায়ঃ|