কালী কথা – ব্রহ্মময়ী কালী মন্দিরের ইতিহাস

34

কালী কথা – ব্রহ্মময়ী কালী মন্দিরের ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দক্ষিনেশ্বর মন্দিরের ইতিহাস এবং মন্দিরের সাথে জড়িত বহু ঘটনা হয়তো আপনারা অনেকেই জাননেন। আজ আপনাদের সেই প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস জানাবো যে মন্দিরের অনুকরনে তৈরী হয়েছিলো রানী রাসমণি এবং ঠাকুর শ্রীরাম কৃষ্ণের দক্ষিনেশ্বর মন্দির।

 

আজ থেকে আড়াইশ বছর আগে এই মন্দির তৈরী হয়। মন্দির তৈরী করেছিলেন সেযুগের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী পরিবার নিয়োগী পরিবার। সেই সময় ব্রিটিশ কোম্পানির সাথে ব্যবসা চলতো নিয়োগী পরিবারের। মুলত চিনির ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ সম্পদ লাভ করেন তারা।

সেই সময়ে এই পরিবারের কর্তা কৃষ্ণচন্দ্র নিয়োগী স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।দেবী এখানে ব্রহ্মময়ী রূপে বিরাজ করছেন। পূজা পাঠ সবই হয় তন্ত্র মতে।

 

শোনা যায় ব্রহ্মময়ী মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রায় সাতাশ বছর পরে রানী রাসমনির জামাই মথুরবাবুকে এই মন্দির সম্পর্কে জানার জন্য এখানে আসতে বলেন এবং মথুরবাবু নিজে এসে এই মন্দির সম্বন্ধে জ্ঞাতব্য বিষয়গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেনে যান এবং পরবর্তীতে এই মন্দিরের আদলে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির স্থাপিত হয়।

 

নবরত্ন শৈলী তে নির্মিত ব্রহ্মময়ী মন্দিরটি বাংলার প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরগুলির অন্যতম।

মন্দিরের মূল বেদী থেকে চৌশট্টি ফুট উঁচুতে অর্থাৎ তন্ত্রমতে চৌশট্টি যোগিনী স্তর পার হয়ে মন্দিরের সর্বোচ্চ তলের মধ্যভাগে শ্বেতবর্ণের হংসেশ্বর শিবলিঙ্গের অবস্থান। একতলায় মা ব্রহ্মময়ী কালী। মন্দিরের চারকোণে চারটি কালো পাথরের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছে। মন্দিরের অভ্যন্তরে পঞ্চমুণ্ড আসনের উপর বেদীতে শবরূপী মহাদেবের উপর কালো পাথরের খড়গমুণ্ডধারিণী ব্রহ্মময়ী মা অধিষ্ঠিন করছেন।

 

মন্দিরের প্রথম তলে সমতল ছাদের চারকোণে চারটি চূড়া। মন্দিরের বেদীমূলে সিংহাসনে নারায়ণ শিলা এবং শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মাতা শ্রী শ্রী সারদা দেবীর চিত্র বর্তমান। মূল মন্দিরের তিনটি প্রবেশপথ তন্ত্রমতে ঈড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্নার প্রতীক। কেবলমাত্র বছরে একবার শিবরাত্রির দিন মন্দিরের উপরে দর্শনার্থীদের যেতে দেওয়া হয়।বাকি দিন গুলি ওই স্থানে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

 

প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পুজো এবং তন্ত্র মতে সমস্ত উপাচার নিষ্ঠা সহকারে পালন করা হয়।

বহু দর্শণার্থী সেই সময় এই মন্দিরে ভিড় করেন।

 

আবার কালী কথার পরবর্তী পর্বে অন্য এক প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক কালী মন্দিরের ইতিহাস

নিয়ে ফিরে আসবোআপনাদের জন্য।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।