বীরভূমের হাড় কাটা কালী মন্দিরের ইতিহাস

143

বীরভূমের হাড় কাটা কালী মন্দিরের ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

প্রাচীন বীরভূমি বা বীরভূমের অজয় তীরে এক প্রাচীন দেবী মন্দির হাড়কাটা মন্দির।আজ

কালী কথায় এই হাড়কাটা মন্দির নিয়ে লিখবো।

 

মন্দিরের প্রাচীনত্ব বোঝা যায়, তার জোড় বাংলা বা প্রাচীন মন্দির শৈলী ও টেরাকোটার কাজ থেকে। এই মন্দিরে তার নমুনা অসংখ্য। গ্রামবাসীদের মতে কালাপাহাড় কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৭৫১ সালে বর্গী আক্রমণে প্রায় ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছিল এই মন্দির।

 

এক কালে এই স্থানের অস্থিশিল্পের বেশ সুনাম ছিল। এইখানে প্রধানত অস্থিশিল্পীদের লোকজন বসবাস করতেন। এবং তাঁরা ষোড়শ শতকে বাণিজ্য করতে আসা বিট্রিশদের অস্থি থেকে বিভিন্ন কারুকার্যমন্ডিত শিল্প সামগ্রী তৈরি করে দিতেন। এই সামগ্রীর ইউরোপে দারুণ চাহিদা ছিল।মুলত বিভিন্ন প্রাণী বা হাতির দাঁত দিয়ে বিভিন্ন মূর্তি বানানোই ছিলো এই শিল্পের বিশেষত্ব।

 

এইভাবে উপার্জিত অর্থ দ্বারা অস্থিশিল্পী তোতারাম মতোবিগঁর নেতৃত্বে সমগ্র অস্থিশিল্পীরা একত্রিত হয়ে মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি ও নয়নাভিরাম মন্দির গড়ে পূজাপাঠ শুরু করেন। যেহেতু অস্থি বা হাড়কাটা কারিগর দ্বারা নির্মিত হয় মন্দির, তাই এই মন্দিরের নাম ‘হাড়কাটা’ মন্দির।

 

মন্দিরে মায়ের যে মূর্তি তা প্রধানত দক্ষিণা কালী। তাঁর ডানের উর্ধ হস্তে খড়্গ ও অধ হস্তে মুণ্ড। এবং বামের উর্ধ হস্তে বর ও অধ হস্তে অভয় মুদ্রা। মা শিবের বুকে দণ্ডায়মানা। কিন্তু মা এখানে একই সঙ্গে ভীষণা এবং একই সাথে বরাভয়প্রদায়নী।

 

অতীতে ১২০ শের আতপ চাল ও বিবিধ ফলমূলের দ্বারা পূজা হত। শোনা যায়, এখানে মা ভীষণই জাগ্রত। কোনও এক সময়ে মূল সেবাইতের দ্বারা কিছু ত্রুটি হলে, তাঁর দ্বাদশ বর্ষীয়া কন্যা নিখোঁজ হন। এবং তাকে খুঁজতে খুঁজতে বিগ্রহের মুখে রক্ত ও কাপড়ের টুকরো দেখতে পাওয়া যায়। তখন মায়ের কাছে আকুল হয়ে ডেকে সেই সেবাইত কন্যাকে ফিরে পান।এসবই অবশ্য প্রচলিত জনশ্রুতি। তবে সবার বিশ্বাস এখানে ভীষণা এবং একি সাথে মঙ্গলময়ী।

 

অতীতে সব অমাবস্যা তিথিতে পুজো হলেও বর্তমান কেবলমাত্র বাৎসরিক দীপান্বিতা অমাবস্যায় প্রধান পুজো সংঘটিত হয়।

 

বাংলার আরো একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক কালী নিয়ে আলোচনা করবো আগামী পর্বে।

চলতে থাকবে কালী কথা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।