কালী কথা – বর্ধমানের মহারাজার কালী পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
একসময় অবিভক্ত বাংলা বিহার উড়িষ্যায় ছোটো স্থানীয় রাজ্য গুলি বেশ ক্ষমতাশালী এবং প্রভাব শালী ছিলো এবং এই সব রাজ্যের রাজাদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন বেশ ধার্মিক যেমন নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বা বর্ধমানের রাজা কন্দর্পনারায়ণ। তারা তাদের রাজত্ব কাকে নির্মাণ করেছেন একাধিক মন্দির।যার অনেকগুলি আজও টিকে আছেন।তেমনই এক মন্দির নিয়ে আজ
এই কালী কথা পর্ব।
বর্ধমানের মহারাজা কন্দর্পনারায় হাওড়া জেলায় বৃন্দাবনতলায় এক কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেবী দক্ষিনা কালী এখানে বাগেশ্বরী নামে বিরাজ করছেন।
মন্দির প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে একটি অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ ও পাওয়া যায়।শোনা যায় কালীভক্ত মহারাজা কন্দর্পনারায়ণ এক রাতে দক্ষিণা কালীকে স্বপ্নে দেখেছিলেন এবং স্বপ্নে মা দক্ষিণা কালী স্বয়ং মহারাজাকে দামোদরের তীরে তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা এবং নিমকাঠের মূর্তি তৈরী করার নির্দেশ দেন শুধু তাই নয় দেবী এও বলেন মূর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নিমকাঠ নিজে থেকেই ভেসে আসবে দামোদর নদীতে।ঠিক যেমন পুরীতে সমুদ্রে জগন্নাথদেবের মূর্তি তৈরীর জন্য দারুব্রহ্ম ভেসে এসে ছিলো।
শুধু সেই প্রথমবার নয় আশ্চর্য জনক ভাবে মন্দির সংস্কার এবং সেই উপলক্ষে নতুন প্রতিমা নির্মাণের সময় প্রতিবারই দেবীর মূর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নীম কাঠ ভেসে এসেছিলো পার্শবর্তী দামোদর নদীর স্রোতে।
বাস্তবেও তাই হয়।মন্দির তৈরী হয়ার পর সত্যিই একদিন জলের স্রোতে ভেসে এসেছিল নিমগাছের প্রকাণ্ড এক গুঁড়ি। সেই গুঁড়ির কাঠ দিয়েই নির্মাণ করা হয়েছিল বিশাল আকৃতির দক্ষিণা কালী এবং দেবীর পদতলে থাকা মহাদেব।
শাস্ত্র মতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর শুরু হয়েছিলো পুজো এবং দ্রুত বাগেশ্বরী কালীর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল দিকে দিকে। তাঁর করুণা লাভ করার জন্য তাঁর দরবারে আসতে শুরু করেছিলেন দেশ বিদেশের ভক্তের দল।সেই জনপ্রিয়তা এবং শ্রদ্ধা ভক্তি আজও অটুট আছে।
আজও দেবীর মন্দিরের আশেপাশের অঞ্চলে কোনও শুভকাজ হলে, আগে মায়ের পুজো দিয়ে তাঁর আশীর্বাদ নেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে।
আজও প্রতিটি অমাবস্যা তিথিতে মহা সমারোহে দেবীর পুজোর আয়োজন করা হয়। দূর দূর থেকে দেবীর পুজো অংশ নিতে আসেন মানুষ।
বাংলায় এমন বিখ্যাত এবং ঐতিহাসিক কালী মন্দিরের সংখ্যা অসংখ্য।ফিরে আসবো আগামী দিনে।কালী কথার পরবর্তী
পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।