কালী কথা – কালীকাপুরের কালী পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
কালী কথায় হাওড়ার একাধিক কালী পুজো নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রতিটি পুজোর রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস এবং প্রায় সবগুলি পুজোর সাথে জড়িয়ে আছে একাধিক অলৌকিক ঘটনা। আজকের কালী কথায় এই জেলারই কালী কাপুরের কালী পুজো নিয়ে লিখবো।
সে প্রায় পাঁচশো বছর আগের কথা। হাওড়ার উদয় নারায়ণপুর সংলগ্ন গঙ্গা তিরবর্তী অঞ্চল তখন জঙ্গলময় ছিল। জঙ্গলে বন্য পশুর দাপট ছিল। কেউ সাহস পেতোনা এখানে আসার। জনশ্রুতি থেকে জানা যায় এই ঘন জঙ্গলেই বাস করতেন এক কাপালিক। তিনি জঙ্গলে একাকী থেকে মা কালীর আরাধনা করতেন।
এই অঞ্চলে আধিপত্য ছিলো বর্ধমান রাজ পরিবারের একবার কাপালিক যখন কিছু দিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে যান তখন বর্ধমানের রাজার নির্দেশে বর্ধমান রাজসভার নবরত্নের একজন তিলক রাম ঘোষ। বর্ধমান থেকে রাজার আদেশ মতোই মা কালীর সেবার উদ্দেশ্যে সপরিবারে হাওড়ার উদয়নারায়নপুরে চলে এসেছিল। তারপর থেকে এই ঘোষ পরিবারই বংশ পরম্পরায় কালী পুজো করে আসছে।
এক সময়ে এই স্থান ছিলো খুবই বিপদজনক। বন্যা পশু এবং দস্যুরাই এলাকা শাসন করতো।
সেই সময় পুজো করার জন্য পুরোহিতের সঙ্গে লেঠেল নিয়ে আসা হতো বন্য পশুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে।বর্তমানে এই অঞ্চলের নাম ‘ কালীকাপুর’। কালী পুজোকে কেন্দ্র করেই গ্রামের এমন নামকরণ।আসলে এই কালী পুজো বা মন্দির কে কেন্দ্র করে এই জঙ্গল ময় দুর্গম এলাকায় জনবসতি গড়ে ওঠে সেই কারনেই গ্রামের নামকরণ হয় কালীকাপুর।
মন্দিরের পুরনো রীতি অনুযায়ী প্রতিদিন একবার মাতৃ পুজো অনুষ্ঠিত হয় এখানে। একবার পুজো হওয়ার কারণেই ‘একাহারি ‘কালী মা ‘ ও বলা হয়।
শোনা যায় অতীতে গ্রামে অন্য কোনও মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ ছিল। বৈশাখের ফলহারিণী, মকর সংক্রান্তি, নবমী এবং শ্যামাকালী পুজো-সহ মোট চারটি বিশেষ পুজো হয় প্রতি বছর।জানা যায়, মন্দিরে কষ্ঠি পাথরের মায়ের যে মূর্তি আছে তা কয়েক শতাব্দী প্রাচীন।
চলতে থাকবে ধারাবাহিক কালী কথা পর্ব। ফিরে আসবো অন্য একটি কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।