বাংলার জেলা গুলির মধ্যে ঐতিহাসিক দিক দিয়ে একসময় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো মুর্শিদাবাদ। সাধারণত মুর্শিদাবাদ বলতেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে সিরাজ দৌলা, পলাশীর যুদ্ধ, মতি ঝিল, হাজার দুয়ারী, ইমামবারার ছবি কিন্তু এই মুর্শিদাবাদেই রয়েছে অন্যতম জাগ্রত এবং প্রসিদ্ধ এক সতী পীঠ যার নাম কিরীটেশ্বরী। এই পীঠকে
কেন্দ্র করে অলৌকিক ঘটনা বা কিংবদন্তীর শেষ নেই।
প্রাচীন ইতিহাস অনুসারে এই স্থানের নাম
ছিল কিরীটকণা। অনেকে মনে করেন এখনে সতীর মুকুটের বা কিরিটের কণা পড়েছিল। আবার কেউ বলেন কিরীট অর্থে এখানে ললাট বা কপাল বোঝানো হয়েছে।তবে মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত সেবাইত দের অনেকেই বলেন কিরীট কথাটি এসেছে করোটি বা মাথার খুলি থেকে। সেই থেকে দেবীর করোটি এখানে পতিত হয়ে ছিলো।
শুধু তাই নয় সেই করোটির টুকরো প্রস্তুরীভূত অবস্থায় আছে বলেই অনেকে মনে করেন।
তাই করোটি থেকে কিরীটী নাম হয়েছে বলেই তাদের ধারনা।
পৌরাণিক ব্যাখ্যা যাই হোক মন্দিরটি বেশ প্রাচীন এবং আদি মন্দির ঠিক কবে কে স্থাপন করেছেন তা স্পষ্ট ভাবে বলা না গেলেও বর্তমান মন্দিরটি বাংলার ১১০৪ সালে নাটোরের রানি ভবানী প্রতিষ্ঠা করেন।পরবর্তী সময়ে মহারাজা
যোগেন্দ্রনারায়ণ রাই ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে নবরূপে
এই মন্দিরের সংস্কার করেন।
তিন ধর্মের স্থাপত্যের মিশেল রয়েছে এই মন্দিরে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের স্থাপত্য শৈলীর অতি সুন্দর এবং যথাযত ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়
এই মন্দিরে।মা কিরীটেশ্বরী এখানে
দক্ষিণাকালী রূপে ধ্যানআসনে পূজিতা।
নিয়ম প্রত্যেক নিশি রাতেই মায়ের পুজো হয়।
শোনা যায় বৃদ্ধ বয়সে নবাব মীরজাফর যখন দুররোগ্য কুষ্ট রোগে আক্রান্ত হন
এই মন্দিরের চরণামৃত গ্রহণ করে কুষ্ঠ রোগ
থেকে মুক্তি পান। পরবর্তী সময়ে কিরীটেশ্বরীতে একটি পুস্করিণী খনন করে দেন
নবাব মীরজাফর। মন্দিরের পাশে করা সেই পুষ্করিণী কালী সাগর নামে পরিচিত।
বহু সতী পীঠ নিয়ে আলোচনা এখনো বাকি আছে।
চলতে থাকবে একান্ন পীঠ নিয়ে এই
বিশেষ ধারাবাহিক আলোচনা।
ফিরে আসবো পরের পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।