আজকের একান্ন পীঠ পর্বে বাংলারই একটি তথাকথিত কম জনপ্রিয় কিন্তু অত্যান্ত জাগ্রত এবং তাৎপর্যপূর্ণ শক্তি পীঠ নিয়ে লিখবো ।
আজকের পর্বে বিতর্কিত শক্তি পীঠ মেলাই চন্ডী|
শুরুতেই এই শক্তিপীঠ কে বিতর্কিত বললাম তার
কারন এই পীঠ সর্বজন স্বীকৃত নয় অর্থাৎ পীঠ নির্ণয় তন্ত্রে এই পীঠকে শক্তিপীঠের মর্যাদা দেয়া হয়নি তবে অন্য কিছু প্রাচীন শাস্ত্রে মেলাই চন্ডীকে পীঠ হিসাবেই দেখানো হয়েছে|১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে রচিত কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কাব্যে আমতার মেলাইচণ্ডীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
যারা বিশ্বাস করেন এটি শক্তিপীঠ তারা মনে করেন দেবী সতীর হাঁটুর মালাইচাকী পতিত হয়ে ছিলো এই স্থানে এবং সেই কারনেই এই পীঠ মালাই চন্ডী নামে পরিচিত|
আরেকটি ভিন্ন মত অনুসারে এই প্রাচীন দেবী মন্দির ও তার পুজো কে কেন্দ্র করে এক কালে বিরাট মেলা বসতো এই অঞ্চলে এবং দেবী এখানে চন্ডী রূপে পূজিতা তাই বহু মানুষের মিলন স্থল এই চন্ডী মন্দির লোক মুখে হয়ে ওঠে মেলাইচন্ডীর মন্দির দেবী প্রসিদ্ধ হন মেলাই চন্ডী রূপে।
প্রচলিত একটি জনশ্রুতি আছে যে দামোদর নদ দিয়ে যেসব সওদাগর যাতায়াত করতেন। তাঁরাই মেলাইচণ্ডীকে স্থাপন করেন নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে। পরে জটাধারী চক্রবর্তী নামের এক ব্রাহ্মণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে জয়ন্তী গ্রাম থেকে প্রস্তররূপী দেবীকে আমতায় নিয়ে আসেন এবং দেবীকে স্থাপন করেন।সেই অর্থে তিনিই এই মেলাই চন্ডী দেবীর প্রথম সাধক এবং প্রতিষ্ঠাতা।
পরবর্তীতে কলকাতার হাটখোলার নামকরা লবন ব্যবসায়ী কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত স্বপ্নাদেশ পেয়ে মেলাইচণ্ডী মন্দির নতুন করে নির্মাণ করে দেন|
বর্তমানে যে মন্দির দেখা যায় ১৩০৯ সালে সেই মন্দিরের সংস্কার হয়েছে।
মূল মন্দিরের মাঝখানে চাতাল ও উঁচু বেদিযুক্ত দুর্গা মণ্ডপ। একটু ঢুকে উপাসনা গৃহ|এই মন্দিরে দেবীর সম্পূর্ণ রূপ নেই। মুখ মন্ডল মালাইচাকির আদলে তৈরি হয়েছে।এখানে দেবীর বাহু এবং পদযুগল নেই।
যদিও সতীর দেহের আসল প্রস্তুরীভূত মালাই চাকি ঠিক কোন স্থানে অবস্থান করছে সুস্পষ্ট ভাবে জানা যায়না।মূলত একটি গোলাকৃতি প্রস্তর খণ্ড এখানে পূজিতা হয় এবং মনে করা হয় এটি সেই আদি প্রস্তুরীভূত দেহখন্ড হতে পারে।
এই দিব্য শীলা খন্ডের পুজোর পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ তিথিতে ঘট হিসেবেও দেবী মেলাই চন্ডীর পুজোর রীতি রয়েছে|
প্রতি বছর বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন মালাই চন্ডীতে
প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয় এবং দুর্গোপুজার সময় এখানে মহোৎসব হয়। দেবী এখানে দুর্গা ও চণ্ডী উভয় রূপেই পুজিত হন। দেবীর সঙ্গে তার ভৈরবকেও নিষ্ঠা সহকারে পুজো করা হয় |
পুজো উপলক্ষে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হয় এই পবিত্র মন্দির প্রাঙ্গনে|মা মালাই চন্ডী কে প্রনাম জানিয়ে আজকের একান্ন পীঠ পর্ব শেষ করলাম|
দেখা হবে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।