ভারতের মন্দির ও তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা রহস্য নিয়ে লিখতে গেলে কোথা থেকে শুরু করা যায় আর কোথায় থামা যায় তা বুঝে ওঠা মুশকিল কারন অসংখ্য মন্দির আর প্রায় প্রতিটি মন্দিরের সাথে যুক্ত আছে একাধিক জনশ্রুতি, কিংবদন্তী যার পরতে পরতে রয়েছে রহস্য|তবুও চেষ্টা করছি নিজের ব্যাস্ত পেশাগত জ্যোতিষ চর্চার পাশাপাশি যতটা সময় পাওয়া যায় তা পড়াশোনা ও গবেষণার কাজে লাগাতে|ফল স্বরূপ এই ধারাবাহিক লেখনী আসতে পেরেছি আপনাদের সামনে|আজকের পর্বে কোনারকের সূর্য মন্দির|
১২৫০ সালে কলিঙ্গের রাজা নরসিংহ দেব কোনারকের সূর্য মন্দির তৈরি করেন|বর্তমানে উড়িষ্যার ভুবনেশ্বর থেকে ৬০ কিলোমিটার ও পুরী থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মন্দিরটি|উড়িষ্যা ও দ্রাবিড় সভ্যতার সংমিশ্রণে ধূসর রঙের বেলেপাথর দিয়ে এই বিশাল রথের আকারের মন্দির তৈরি হয়েছে যার সম্মুখে রয়েছে সূর্যদেবের সাত জোড়া ঘোড়া।
আজও এই কোনারক সূর্য মন্দির বহন করে চলেছে একাধিক রহস্য|এই মন্দিরে না আছে বিগ্রহ না হয়েছে কোনদিন পূজা|কিন্তু কেনো?
সেও এক রহস্য|
রাজার আদেশ ছিলো এই মন্দিরে প্রতিদিন ১২০০ শ্রমিক কাজ করবে আর তারা ১২ বছরে এই মন্দির নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করবে। এই সময়ের থেকে একদিন কমবেশি বা একজন শ্রমিক কম-বেশি হলে সকলের প্রাণদণ্ড দেওয়া হবে|কিন্তু সেই আদেশ শেষ পয্যন্ত মানা হয়নি|নির্মাণ কাজে অংশ নেয়া এক শ্রমিকের পুত্র ধর্মদাস মঙ্গলঘট নির্মাণের কাজে হাত লাগায় এবং সফল হয়। কিন্তু তাতে রাজার নির্দেশ অমান্য করা হয় কারণ শ্রমিকের সংখ্যা ১২০০ থেকে ১২০১ হয়|তখন ধর্মদাস ১২০০ শ্রমিকের জীবন বাঁচানোর জন্য মন্দিরের চূড়া থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তখন থেকেই এই মন্দির অপবিত্র হয়ে যায়। তাই এই মন্দিরে আজও পূজা হয়না|
এই মন্দিরের আরেকটি রহস্য হল এর চুম্বকত্ব যা অনেক বড় বড় জিনিসকেওআকর্ষণ করতো নিজের দিকে|শোনা যায় ইংরেজরা যখন পুরী বন্দরে তাদের জাহাজ নিয়ে আসত তখন মাঝেমধ্যেই দিকভ্রান্ত হয়ে পড়তো। তখন ইংরেজরা এর কারণ অনুসন্ধান করে জানতে পারেন যে মন্দিরের ভেতরে রয়েছে এক বিশাল আকার শক্তিশালী চুম্বক। তখন তারা নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য এই মন্দির থেকে চুম্বক খুলে নিয়ে যায় এতে মন্দিরের কিছু ক্ষতিও হয় যা পরে মেরামত করা হয়|
আমার মতে কোনারক মন্দিরের সবথেকে বেশি রহস্যময় দিক হলো তার নির্মাণ শৈলী যা জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত, জ্যামিতি আর ভাস্কর্যের এক অদ্ভুত জটিল সংমিশ্রনে তৈরি|রথ এর আদলে তৈরী এই সূর্য্য মন্দিরের ১২ জোড়া চাকা ছিল আদতে প্রতিটা চাকা একেকটি সূর্য্য ঘড়ি|মন্দির গাত্রে চিত্রিত ভাস্কর্য্য ও কম রহস্যময় নয় যা নিয়ে আজও গবেষণা হচ্ছে সারা বিশ্ব জুড়ে|
দেবতা না থাকলেও, পুজো না হলেও প্রাচীন ভারতের শিল্পকর্মের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরন হিসেবে কোনারক সূর্য মন্দির সারা পৃথিবীতে সমাদৃত|
আগামী পর্বে আবার ফিরবো এক নতুন মন্দিরের রহস্য নিয়ে|আবার শুরু করেছি চেম্বারে বসা তার পাশাপাশি অনলাইনে ভাগ্য বিচার তো চলছেই প্রতিদিন|আগামী দিনে জেলায় ও রাজ্যের বাইরের যাওয়ার ও পরিকল্পনা রয়েছে|এতো কিছুর মাঝে লেখা লেখিও চলবে সমান তালে|পড়তে থাকুন|প্রয়োজনে উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|