আমার লেখা একাধিক ধারাবাহিক লেখনী এবং বিশেষ পর্ব আপনাদের বেশ ভালো লাগে তা আপনারা নানা ভাবে জানিয়ে থাকেন|আপনাদের প্রশংসা ও উৎসাহ আমাকে উদ্বুদ্ধ করে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে লিখতে|আজকাল জ্যোতিষ চর্চা, নিয়মিত লাইভ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি হৃদয়েশ্বরী মাসর্বমঙ্গলা মন্দিরের কাজে অনেক টা সময় ব্যয় করতে হয়|এতসব গুরু দায়িত্ব সামলানোর পর যতটা সময় হাতে পাই নিজেকে নিয়োজিত রাখি গবেষণা ও লেখালেখির কাজে|ইতিমধ্যে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ, শক্তি পীঠ এবং দশ মহাবিদ্যা পর্ব গুলি পাঠক মহলে বেশ সমাদৃত হয়েছে|এবার একটি সম্পূর্ণ নতুন ধারাবাহিক লেখনী নিয়ে আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত|এই পর্ব গুলি তে লিখবো কলকাতা কলকাতা পার্শবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু প্রসিদ্ধ কালী মন্দির নিয়ে|জানাবো তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা অনেক অজানা ও অলৌকিক গল্প|আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে|আজ প্রথম পর্বে চিত্তেশ্বরী কালী মন্দির|
কলকাতার প্রাচীন কালী মন্দির গুলির মধ্যে একদম প্রথম সারি তে রয়েছে চিত্তেশ্বরী কালী মন্দির|বর্তমান চিৎপুর অঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির নিয়ে রয়েছে অজস্র কিংবদন্তী ও অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ|এই মন্দিরের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠার সঠিক সময় নিয়ে ঐতিহাসিক ও গবেষক দের মধ্যে রয়েছে মতবিরোধ|অনেকেই বিশ্বাস করেন কথিত, ষোড়শ শতকে এই মন্দির বানিয়েছিলেন তৎকালীন ধনী জমিদার মনোহর ঘোষ যিনি একসময়ে আকবরের মনসাবদার টোডর মলের রাজ কর্মচারী ছিলেন|আবার কেউ কেউ মনে করেন এই মন্দির নির্মান করেন ও দেবীকে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন সেই সময়ের এই অঞ্চলের কুখ্যাত ডাকাত চিতে বা চিতু|তার নাম থেকেই নাকি এই অঞ্চলের নাম হয় চিৎপুর| বহু গবেষক আবার ভিন্ন মত পোষণ করে বলেছেন চিত্তেশ্বরী’ মন্দির থেকেই এলাকার নাম হয় চিৎপুর এবং এই মন্দির ও দেবী আরো অনেক বেশি প্রাচীন|
বহু মানুষের বিশ্বাস, এই মন্দিরে দেবী নিরন্তর অবস্থান করেন|এই মন্দির চত্বরে মূল মন্দিরে দেবী সর্বমঙ্গলা ছাড়াও আছে তিনটি শিব মন্দির। লোকমুখে শোনা যায় এককালে এই এলাকা ছিলো
অত্যান্ত দুর্গম|ছিলো ভয়ঙ্কর বাঘ ও দুর্ধর্ষ ডাকাতের উৎপাত|সত্যি মিথ্যে প্রমান করা মুশকিল তবে লোক মুখে শোনা যায় এক কালে ডাকাতরা নাকি এখানে নরবলি দিয়ে ডাকাতি করতে বেরোতো|ডাকাত দের আতঙ্কে জমিদার পরিবার এই স্থান ত্যাগ করে চলে যান বলে মনে করা হয়|
একটি প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে, একবার মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে গঙ্গার জলে ভেসে আসা নিম কাঠ সংগ্রহ করে তাই দিয়ে মা চণ্ডীর বিগ্রহ তৈরি করেন চিতু ডাকাত৷ সাধারণত কালী রূপেই শক্তির আরাধনা করে থাকেন ডাকাত সর্দাররা কিন্তু এখানে মা চিত্তেশ্বরী দশভুজা দুর্গা রূপে পূজিতা হন আর মায়ের সামনে রয়েছে জঙ্গল রাজ বাঘ|শোনা যায় চিতে ডাকাতের মৃত্যুর পরে তৎকালীন জমিদার মনোহর ঘোষ ও নৃসিংহ ব্রহ্মচারী এই মন্দিরকে পুনর্প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং নিয়মিত নিষ্ঠা সহকারে পূজা চালু রেখেছিলেন যা আজও চলে আসছে|
বর্তমানে সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বংশধররা এই মিন্দিরের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন|এখানে রীতি অনুসারে মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো এবং তার আগে নিমকাঠের বিগ্রহে প্রথা মেনে হয় দেবীর অঙ্গরাগ| তারপরে হয় মায়ের চক্ষুদান এবং প্রাণ প্রতিষ্ঠা| দেবীর মূল পুজো শুরু হয় ষষ্ঠীতেই|
আজ প্রথম পর্বে চিত্তেশ্বরী কালী মন্দির নিয়ে লেখা এখানেই শেষ করছি|কলকাতার কালী শীর্ষক এই ধারা বাহিক লেখনী চলতে থাকবে|আগামী পর্বে অন্য কোনো কালী মন্দিরের কথা নিয়ে আসবো আপনাদের জন্য|যাওয়ার আগে বলে রাখি যারা জ্যোতিষ পরামর্শ নিতে চান বা মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরে শাস্ত্র মতে গ্রহদোষ খণ্ডন করাতে চান তাদের জন্য আমার নাম্বার উল্লেখ করাই আছে|ফোন করে সরাসরি আমার সাথে কথা বলতে পারেন|ভালো থাকুন ধন্যবাদ|