বাঁকুড়ার জমিদার বাড়ির দূর্গা পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
বাংলার প্রাচীন রাজবাড়ী বা জমিদার বাড়িরপুজো মণ্ডপ গুলি বা বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে ধারাবাহিক লিখছি । আজকের পর্বের বিষয়
বাঁকুড়ার প্রসিদ্ধ রায় চৌধুরী বাড়ির পুজো।
গ্রামের নাম দামোদরবাটি জমিদার দামোদর নারায়ণ চৌধুরী এর নাম অনুসারেই গ্রামের নামকরণ হয়।কথিত আছে চৌধুরী পরিবারের আদি পুরুষ তৈলক্যনাথ গুহ বাংলাদেশের যশোরের জমিদার ছিলেন। বর্গিদের হাত থেকে বাঁচতে যশোর ছেড়ে হাজির হয়েছিলেন মল্লগড় বিষ্ণুপুরে। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজারা আশ্রয় দিয়েছিল ওই জমিদারকে। পরবর্তীকালে রায় চৌধুরী উপাধি দেন মল্ল রাজারা। মল্লরাজাদের সৌজন্যে আর্থিক ভাবে চৌধুরী জমিদাররা সমৃদ্ধি লাভ করে।দামোদরবাটিতে নতুন করে তৈরি হয় প্রাসাদ।
শুরু হয় দুর্গাপুজো।বাঁকুড়ার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় এই পুজো প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন।
সেকালে জমিদাররা বড়ো দীঘি বা পুকুর খনন করতো জলের সমস্যা দূর করতে।একবার পুকুর ক্ষণনের সময় ঘটেএক অলৌকিক ঘটনা।
শোনা যায় গ্রামের বড়পুকুর খননের সময় নিম কাঠের দুর্গার দ্বিভুজা মাতৃ মূর্তি উদ্ধার করেন চৌধুরী পরিবারের এক বংশধর। মনে করা হয় এই ঘটনাকে দেবীর আদেশ হিসেবেই দেখে ছিলেন চৌধুরী পরিবার।তারপর থেকেই চৌধুরী পরিবারে ঘটা করে শুরু হয় দুর্গাপুজা।
দূর্গা পূজোর সময়ে আজও জমিদার বাড়ির দুর্গা দালানে বেজে ওঠে নহবতের সুর মুর্ছনা। এখানের প্রতিমা একটু অন্যধরনের। এখানে নিমকাঠের দেবী দুর্গা দ্বিভুজা। উপরে মহাদেব। দেবীর পাশে কার্তিক, গনেশ, লক্ষী স্বরসতী। মল্লরাজাদের মৃন্ময়ীর কাঠামো অনুরুপ চৌধুরী জমিদার বাড়ির দুর্গা। বৈষ্ণব মতে পুজো হয়।প্রাচীন তালাপাতার চন্ডী পাঠ করা হয় জমিদার বাড়ির দুর্গাদালানে।
সব মিলিয়ে ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিকতার এক সম্মিলিত রূপ এই বনেদি বাড়ির দূর্গা পুজো।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য কোনো বনেদি বাড়ির দূর্গাপুজো নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
