চাঁচল রাজবাড়ির দূর্গা পুজো 

58

চাঁচল রাজবাড়ির দূর্গা পুজো

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

শুধু কলকাতা বা দক্ষিণ বঙ্গের পুজো নয় উত্তর বঙ্গেও এমন অনেক বনেদি বাড়ির পুজো আছে যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।আজ আলোচনা করবো মালদার চাঁচল রাজ বাড়ির পুজো নিয়ে।

সতেরো শতকের শেষভাগ। সেই সময় উত্তর মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরি। প্রজাদরদী এবং ধর্মপ্রাণ রাজা ছিলেন তিনি। শোনা যায় একবার রাজা দেবী চণ্ডীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে মহানন্দার ঘাটে স্নান করতে যান। সেই সময় তাঁর হাতে অলৌকিক ভাবে চতুর্ভুজা অষ্টধাতুনির্মিত মূর্তি উঠে আসে। দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি মহানন্দার ঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে তিনি

প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো।

সেই সময় থেকেই প্রতিবছর চাঁচল রাজবাড়িতে বেশ ধুমধাম করে দুর্গাপুজো শুরু হয়। পরবর্তীকালে পুজোর জন্য পাকা মন্দির নির্মাণের করেন রাজা । মন্দির তৈরির পর রাজা রামচন্দ্র দুর্গাপুজোর জন্য সেই সময় বেশ প্রায় সাত হাজার টাকাও বছরে বরাদ্দ করেন।শুরু হয় ধুমাধাম করে দূর্গা পুজো।

সেই রাজা নেই সেই রাজ্যপাটও নেই। চাঁচল রাজবাড়িতে এখন স্থাপিত হয়েছে কলেজ, মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, আদালত-সহ একাধিক সরকারি দপ্তর। তবে রাজবাড়ির একাংশে থাকা ঠাকুরবাড়ি এখনও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে।পুজোও হয়।

দূর্গা পূজা উপলক্ষে বাড়ির সদস্যরা একত্রিত হয়।

সেই জৌলুস হয়তো নেই। তবে নিষ্ঠা সহকারে আজও দেবী এখানে পূজিতা হন। নিয়ম করে প্রতিটি শাস্ত্রীয় রীতি নীতি আজও পালিত হয়।

আজও প্রাচীন প্রথা মেনে সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা মা চণ্ডীকে। দশমীতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান। এখানে সতের দিন

ধরে উৎসব পালিত হয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে

চাঁচল রাজ বাড়ির এই পুজো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অদ্ভুত নিদর্শন। এখানে বিসর্জনের সময় মহানন্দার নদীর ধরে বৈরগাছি

নামক এলাকার মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ লণ্ঠন নিয়ে মাকে পথ দেখান।এই রীতি শুরুর দিন

থেকে আজও প্রচলিত আছে।

আসন্ন দূর্গা পুজো উপলক্ষে চলতে থাকবে এই সব ঐতিহাসিক রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়ির পুজো গুলি নিয়ে আলোচনা। ফিরে আসবো

আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।