কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণর বিশ্বরূপ

29

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণর বিশ্বরূপ

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

যার মধ্যে সর্বগুন সর্বোচ্চ মাত্রায় বর্তমান তাই তিনি ভগবান। তাই ভগবানের মর্যাদা একমাত্র কৃষ্ণই পান।যদিও কৃষ্ণের বালক রূপ অর্থাৎ গোপাল বা প্রেমিক রূপের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি তবে শাস্ত্রের তাকে নানা রূপে ও নানা ভূমিকায় পাওয়া গেছে। কৃষ্ণের এই রূপ গুলির মধ্যে তার উগ্র রূপ হলো বিরাট রূপ বা বিশ্বরূপ।আজ আলোচনা করবো তার বিশ্বরূপ বা বিরাট রূপ নিয়ে|

মহাভারতে কৃষ্ণ দুবার নিজের বিশ্বরূপ দেখিয়েছেন। মহা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে যখন কৃষ্ণ পাণ্ডবদের দূত হিসেবে দুর্যোধনের দরবারে যান তখন দুর্যোধন কৃষ্ণকে অপমান করেন এবং বন্দী করার চেষ্টা করেন। তখন ক্রোধে শ্রী কৃষ্ণ তার বিরাট রূপ ধারণ করেন। সবাই ভীত হয়ে পড়েন এবং বিজ্ঞরা সেই সময় মহাভারতের যুদ্ধের ভয়াবহতে এবং পরিনাম আন্দাজ করে নেন।

পরবর্তীতে কুরুক্ষে যুদ্ধে কৃষ্ণ বার বার অর্জুনকে নিজের বিশ্বরূপ দেখার আজ্ঞা দেন, কিন্তু অর্জুন কিছু দেখতে পারেন না|তখন কৃষ্ণ বলেন-কিন্তু তুমি নিজের এই চোখ দিয়ে আমার দিব্য রূপ দেখতে পারবে না। তাই আমি তোমায় দিব্য চক্ষু দিচ্ছি। যার সাহায্যে তুমি আমার ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেখতে পারবে|

এরপর অর্জুনকে দিব্য দৃষ্টি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে নিজের পরম ঐশ্বরিক বিরাট রূপ দেখান।গোটা বিশ্ব ব্রম্ভান্ড যেনো এই রূপের কাছে তুচ্ছ|মনে করা হয় যদি আকাশে একসঙ্গে হাজার সূর্যোদয় হয়, তখনও তাদের সকলের প্রকাশ মিলে সেই বিরাট রূপের প্রকাশের সামনে দাঁড়াতে পারবে না।
শ্রী কৃষ্ণের এই রূপে অনেক মুখ ও চোখ আছে, অনেক অলৌকিক অলঙ্কার আছে, হাতে নানান দিব্য অস্ত্র-শস্ত্র আছে এবং তার গলায় নানান ধরণের দিব্য মালা আছে| তিনি একপ্রকার অলৌকিক বস্ত্র পরে আছেন ও যাঁর ললাট ও শরীরে দিব্য চন্দন, কুমকুম ইত্যাদি লাগানো রয়েছে|

শাস্ত্রে উল্লেখ আছে এমন বিরাট রূপ দেখে অর্জুন আনন্দ পান ভয় ও পানা।তাঁর মধ্যে অদ্ভুত শিহরণ দেখা দেয়। তিনি করজোড়ে এবং মাথা নুইয়ে প্রণাম করে বিরাট রূপ শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করতে শুরু করেন|অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড যাঁর শরীরের বর্তমান সেই ভগবান আমার রথের সারথি হয়েছেন এটা ভেবে অর্জুন নিজেকে ধন্য মনে করেন।

আবার পরের পর্বে শ্রী কৃষ্ণের মহিমা এবং তার সাথে সংযুক্ত অন্য একটি পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।