কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণের দ্বারকা নগরীর 

57

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণের দ্বারকা নগরীর

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শ্রী কৃষ্ণের দ্বারা কংস বধের ঘটনা আমরা অনেকেই জানি|কংস মৃত্যুর পর কংসের শ্বশুর, মগধের রাজা জরাসন্ধ এবং অসুর কাল যবনের

হাত থেকে যাদব বংশ রক্ষা করতে কৃষ্ণ মথুরা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং নতুন এক নগরী তৈরির সিদ্ধান্ত নেন|এই নগরীই ছিলো দ্বারকা নগরী। দ্বারকা অবস্থিত ছিলো গুজরাটের পশ্চিম সীমানায়।

 

দ্বারকা নগরী প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষ্ণ দেব শিল্পী ‘বিশ্বকর্মার’ সাহায্য নেন। বিশ্বকর্মা কৃষ্ণকে জানান, যদি সমুদ্রের দেবতা ‘সমুদ্রদেব’ তাদেরকে কিছু জমি প্রদান করেন শুধুমাত্র তবেই এ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। কৃষ্ণ তখন সমুদ্রদেবের পূজা করেন এবং সমুদ্রদেব খুশি হয়ে কৃষ্ণকে বারো যোজন জমি প্রদান করেন। জমি পাওয়ার পর বিশ্বকর্মা সেখানে দ্বারকা নগরী নির্মাণ করেন এবং শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় স্বপরিবারের বসবাস করতে শুরু করেন। দ্বারকার রাজা হিসেবে তার হয় দ্বারকাধীশ।

 

পুরান থেকে ও বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে জানা যায়, পুরো দ্বারকা নগরী মোট ৬টি ভাগে বিভক্ত ছিল। আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, চওড়া রাস্তা, নগরচত্বর, সোনা, রূপা ও দামী পাথর দিয়ে নির্মিত বিশাল বিশাল প্রাসাদ, জনগণের সুযোগ সুবিধার জন্য নানা স্থাপনা সহ নানা উদ্যান এবং বিরাট বিরাট দীঘি ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠেছিল দ্বারকা নগরী।

 

প্রায় ৭ লক্ষ ছোটবড় প্রাসাদ ছিল এ নগরীতে। এখানে ছিল ‘সুধর্ম সভা’ নামের এক বিশাল হলঘর, যেখানে নানা ধরনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হতো। গোটা নগরীটি ছিল জলবেষ্টিত। এটি ছিল মূলত একটি দ্বীপ-নগর। চারপাশে বেষ্টিত জলরাশি দ্বারকাকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতো।শ্রী কৃষ্ণের জন্য রাজ প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিলো এই নগরের কেন্দ্র স্থলে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো তার চারপাশে। কৃষ্ণের সখা সুদামা এই প্রাসাদে কৃষ্ণের সাথে দেখা করতে এসেছে প্রথমে বাধা প্রাপ্ত হয়ে ছিলো। সেই ঘটনা আপনাদের আগের পর্বে বলেছি।

 

কৃষ্ণ তার বাকি জীবন এ দ্বারকা নগরীতেই অতিবাহিত করেছিলেন। শেষের দিকে তিনি ভাল্কা তীর্থের এক বনে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দুর্ঘটনাবশত এক শিকারীর তীরের আঘাতে নিহত হন। কৃষ্ণের মৃত্যুর পর যদু বংশ ধ্বংস হয় এবং গোটা দ্বারকা নগরী এক বিশাল বন্যায় সমুদ্রের গভীরে হারিয়ে যায়|এই মহা প্লাবনের পূর্বে অর্জুন দ্বারকায় আসেন এবং যাদব বংশের নারীদের রক্ষা করে হস্তীনাপুরে নিয়ে যান।

 

আবার আগামী পর্বে কৃষ্ণ কথা নিয়ে ফিরবো। থাকবে আরো অনেক পৌরাণিক ঘটনা

এবং তথ্য। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।