কৃষ্ণ কথা – কৃষ্ণ এবং সুদামা

65

কৃষ্ণ কথা – কৃষ্ণ এবং সুদামা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শ্রী কৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিলো মূলত কংসর অত্যাচার থেকে তার ভক্তদের রক্ষা করতে এবং ধর্ম পুনঃরস্থাপন করতে তবে তার অসংখ্য লীলার মাধ্যমে কৃষ্ণ রূপে তিনি প্রেম এবং ভগবানের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কৃষ্ণ রূপে তিনি তার ভক্তদের সাথে সখা ভাবে মিশেছেন যার সব চেয়ে বড়ো উদাহরণ কৃষ্ণ এবং সুদামার সম্পর্ক। কৃষ্ণকে বুঝতে হলে এই

সম্পর্ককে ভালো করে বুঝতে হবে।

 

বৃন্দাবনের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণকারী সুদামা ছিলেন বলরাম এবং কৃষ্ণর সহপাঠী তারা একসাথে বৃন্দাবনে আচার্য সন্দীপনের আশ্রমে অধ্যয়ন করতেন এবং তখন থেকেই তাদের বন্ধুত্ব তৈরী হয়। এরা তিন জন ছিলেন সন্দীপন ঋষির প্রিয় ছাত্র।

 

পরবর্তীতে কৃষ্ণ দ্বারকা রাজ্যের সিংহাসন লাভ করেন অন্যদিকে সুদামা দারিদ্র্যতার জীবনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন । এতো কিছুর পরেও তার ভক্তি, অনুরাগ এবং কৃষ্ণপ্রেম অব্যাহত ছিল।তিনি জানতেন বন্ধু তাকে ভুলবেননা। একদিন আবার তিনি তার বন্ধুর সানিধ্য পাবেন।

 

সুদামার সর্বদা অর্থের অভাব ছিল। প্রায়শই তার বাচ্চারা রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বহু বছর পরেও কৃষ্ণের প্রতি সুদামার ভালোবাসা কমেনি এবং কৃষ্ণের গল্প তার বাচ্চাদের শোনাতেন। তার স্ত্রী সুশীলা একবার তাকে জোর করে ভগবান কৃষ্ণের সাথে দেখা করতে পাঠান।

 

সুদামা তার স্বাভাবিক মলীন এবং ছেঁড়া কাপড় পরে দ্বারকার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। পথে কিছু ভিক্ষা গ্রহন করে সেই সাধারণ খাদ্য দ্রব্য বন্ধুর উদ্দেশ্যে পুটলিতে বেঁধে নিলেন।

 

অবশেষে ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত সুদামা দ্বারকায় পৌঁছেন।দ্বার রক্ষীরা তাকে প্রাসাদে প্রবেশ করতে দেয়না কারণ তাদের কাছে তিনি এক সাধারণ ভবঘুরে পথিক।

 

এদিকে কৃষ্ণের আগমনের খবর পৌছায় দ্বারকার অন্দর মহলে।সুদামা প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে আছেন শুনে কৃষ্ণ সরাসরি মূল ফটকের দিকে দৌড়ে গেলেন। কৃষ্ণের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করে।আবেগে ভরা হৃদয় নিয়ে কৃষ্ণ সুদামাকে জড়িয়ে ধরে তাঁর সিংহাসন অর্পণ করেন । তিনি তার অশ্রু দিয়ে সুদামার পা ধুয়ে দিলেন।সুদমার আনা খাদ্য সাদরে গ্রহন করলেন।বসালেন স্ত্রী রুক্মিণীর আসনে। কিছু দিন সেবা এবং আতিথ্য গ্রহন করে সুদামা জাগতিক কিছু না চেয়ে খালি হাতেই ফিরে এলেন।কারণ তিনি প্রিয় বন্ধুকে কাছে পেয়ে নিজের সব অভাব অভিযোগ ভুলে গেছিলেন।

 

গ্রামে ফিরে হতবাক হলেন সুদামা।দেখলেন তার পুরানো এবং ভাঙা কুঁড়েঘরটি একটি জমকালো প্রাসাদে রূপান্তরিত হয়েছে। স্ত্রীও রাজ রানী হয়েছেন। দারিদ্রতার অভিশাপ মুছে গেছে।

তিনি হয়তো কৃষ্ণকে তার অভাবের কথা বলতে পারেননি। কিন্ত অন্তর্যামী ভগবান সব বোঝেন। তার কাছে কিছুই গোপন থাকেনা।

ভগবানের প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং সমর্পন থাকলে তার অভাব দুর হয়। সব মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।

 

ভগবান কৃষ্ণকে নিয়ে আরো অনেক পৌরাণিক ঘটনা এবং তথ্য নিয়ে আবার ফিরে আসবো

আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।