ভক্তের ভগবান – শ্রী কৃষ্ণ এবং বারবারিক
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
রাজস্থানের সিকারে খাটুশ্যামজির বড় মন্দির রয়েছে।অসংখ্য ভক্তসমাগম হয় এই মন্দিরে।
মনে করা হয় খাটু শ্যাম এর কাছে করা প্রতিটি মনোস্কামনা পূর্ণ হয়। এই খাটু শ্যাম আসলে ঘটৎকচের পুত্র বারবারিক। শ্রী কৃষ্ণের বরে তিনি আজও পূজিত হচ্ছেন।
মহাদেব বারবারিককে বর দিয়েছিলেন, তিনি তাঁর ‘তিনটি তীর’ দিয়েই বিশ্বজয় করতে পারবেন। প্রথম তীরটি দিয়ে বারবারিক যা যা ধ্বংস করতে চান সেগুলি চিহ্নিত করতে পারতেন। দ্বিতীয় যে তীর তা দিয়ে বারবারিক যাকে যাকে বাঁচাতে চান তাদেরকে চিহ্নিত করতে পারতেন। আর তৃতীয় তীরটি দিয়ে প্রথম তীর দ্বারা চিহ্নিত সকল বস্তু ধ্বংস করতে পারতেন।
এই তিন তীর নিয়েই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে লড়তে উদ্যোগী হন বারবারিক। তিনি চাইতেন যে পক্ষ হারবে তিনি তার হয়ে যুদ্ধ করবেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ অচিরেই বুঝেছিলেন, বারবারিকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ কোনও পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। বারবারিক এর জন্য এই যুদ্ধ শেষই হবেনা। আদি অনন্ত কাল ধরে চলবে।তখন শ্রীকৃষ্ণ এক ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে তাঁর পথ আগলে দাঁড়ান। আর জিজ্ঞেস করেন, বারবারিক কার পক্ষে লড়তে চান।বারবারিক বলেন তিনি পক্ষ বদলে বদলে মায়ের আদেশ মতো দুর্বলের পক্ষে লড়বেন।
অর্থাৎ বারবারিক যদি যুদ্ধ করেন তাহলে শেষে তিনিই শুধু বেঁচে থাকবেন। আর কেউ নয়।
তাই এরপর কৃষ্ণ ভিক্ষা হিসেবে বারবারিকের মস্তক চান। এবারে বারবারিক বুঝতে পারেন যে এই ব্রাহ্মণ সাধারণ কেউ নন। পরিচয় জানতে চাইলে কৃষ্ণ নিজের রূপ ধারণ করেন। আর তারপর বারবারিক তারপর কৃষ্ণকে নিজের মস্তক কেটে নিবেদন করেন।
তবে মস্তক নিবেদন করলেও বারবারিক শর্ত দিয়েছিলেন। তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ দেখতে চান। ফলে শ্রীকৃষ্ণ বারবারিকের মস্তক একটি উঁচু ঢিবির ওপর রাখেন। যাতে বারবারিক অনায়াসে যুদ্ধ দেখতে পান।যুদ্ধ শেষে বারবারিকের মস্তক বলে ওঠে শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের পক্ষে ছিলেন বলেই তাঁরা জিততে পেরেছেন।
শ্রীকৃষ্ণ বারবারিককে বর দিয়েছিলেন যে তিনি কলিযুগে খাটুশ্যাম নামে পূজিত হবেন। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, “তোমার পুজো আমি আমার নিজের পুজো বলেই গ্রহণ করব।” সেই থেকেই খাটু শ্যামের প্রসিদ্ধি সর্বত্র ছড়িয়ে পরে।
আবার ভক্ত এবং ভগবানের লীলা নিয়ে পরবর্তী পর্বে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।