ভক্তের ভগবান – জগন্নাথের মুসলিম ভক্ত শালবেগ

22

ভক্তের ভগবান – জগন্নাথের মুসলিম ভক্ত শালবেগ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরীর জগন্নাথ দেব জগতের নাথ। সারাবছর তার মন্দিরে প্রবেশে অনেক বিধি নিষেধ আছে। সনাতন ধর্মের বাইরের কেউ তার মন্দিরে প্রবেশের অধিকার পায়না। তবে রথ যাত্রার সময় প্রভু নিজে বেরিয়ে আসেন মন্দির থেকে এবং জাতী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রভু তার ভক্তদের সাথে মিলিত হন।

 

এই পুরীর মন্দির থেকে প্রায় দুশো মিটার দূরে অবস্থিত শালবেগ মাজার। এই মাজারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জগন্নাথদেবের এক মুসলিম

ভক্তের কথা।আজকের পর্বে এই ভক্ত প্রসঙ্গে আলোচনা করবো।

 

প্রতি বছর মাসির বাড়ি যাওয়ার পথে প্রথা মেনে পথে এক জায়গায় আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ে জগন্নাথ দেবের রথ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে তাঁর এক মুসলিম ভক্তকে দর্শন করতেই প্রতি বছর পথে একটি মাজারের সামনে জগন্নাথের রথ দাঁড়িয়ে পড়ে।

 

মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরের আমলে বাংলার গভর্নর ছিলেন জাহাঙ্গীর কুলি খান। এক হিন্দু ব্রাহ্মণ ঘরের মহিলাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। জগন্নাথের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন ওই মহিলা। তাদের সন্তান হলেন শালবেগ ধর্মে মুসলিম হলেও মায়ের প্রভাবে তিনি হয়ে উঠে ছিলেন জগন্নাথ দেবের পরম ভক্ত। কিন্তু পুরীর মন্দিরে অহিন্দুর প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় তিনি কখনও জগন্নাথ দেবকে দর্শন করতে পারেননি।

 

মৃত্যুর আগে তিনি মন্দিরের কাছে একটি কুঁড়েঘর তৈরি করে সেখানেই জীবনের শেষ কটি দিন কাটিয়ে যান। প্রচলিত বিশ্বাস, শেষ শয্যায় ওই ভক্তের কান্না ঈশ্বরের হৃদয় স্পর্শ করে।তিনি শালবেগকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে তাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি নিজে আসবেন তার সাথে দেখা করতে।

তারপর রথের দিন রথ সেই কুটিরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে আচমকা রথের চাকা থেমে যায় এবং বহু চেষ্টায় রথের চাকা নড়ানো যায়নি। তারপর থেকে প্রতিবছর রথ যাত্রার সময়ে সেই

নিদ্দিষ্ট স্থানে রথ থামানো হয়।

 

এখন ওই স্থান একটি মাজারে পরিণত হয়েছে এবং প্রতি বছর রথযাত্রার সময় ওই মাজারের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভক্তকে দর্শন দিয়ে যান জগন্নাথ মুঘল আমল থেকে আজও এই প্রথা

চলে আসছে।

 

ভক্তের ভক্তি যদি খাঁটি হয় ভগবান কৃপা করবেনই

এই ঘটনা থেকে এই চরম সত্য

আরো একবার প্রমাণিত হয়।

 

ভক্তের ভগবানের পরবর্তী পর্বে আবার এমনই

এক ভক্ত এবং ভগবানের লীলা নিয়ে

ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।