ভক্তের ভগবান
ভক্তের সাথে শ্যামাচরণ লাহিড়ীর লীলা
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
যোগীরাজ শ্যামা চরম লাহিড়ী যিনি লাহিড়ী মশাই নামে বেশি বিখ্যাত তিনি ছিলেন সাক্ষাৎ ভগবত প্রাপ্ত এক সিদ্ধ পুরুষ এবং ক্রিয়া যোগী। তিনি তার ভক্তদের সাথে একাধিকবার অলৌকিক লীলা করেছেন আজ সেই সব ঘটনার মধ্যে দুটি বিশেষ ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো এবং এই ঘটনা দুটি থেকে বোঝা যায় তিনি তার স্মরণাগত ভক্তদের কিভাবে আপদে বিপদে রক্ষা করতেন।
বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ের বড়সাহেব ভগবতীচরণ ঘোষের অধস্তন কর্মচারী ছুটি নিয়ে বারাণসী যাবেন তাঁর গুরু শ্যামাচরণ লাহিড়ীর কাছে। ভগবতীবাবু ছুটি দেননি সেদিন।সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার পথে আচমকা শূন্য থেকে ফুটে উঠল একটি ব্যাক্তি । দীপ্ত কণ্ঠে ভর্ৎসনা করে বললেন ‘ভগবতী, তুমি কর্মচারীদের প্রতি খুব নির্দয়।’ পরক্ষণেই মিলিয়ে গেল সেই মূর্তি। অধস্তন কর্মীটি তত ক্ষণে আবেগ চেপে রাখতে পারেননি, গুরুদেব বলে কেঁদে ফেলেছেন।কারন যিনি এসেছিলেন তিনি স্বয়ং শ্যামাচরণ লাহিড়ী। ছুটি মঞ্জুর হয় । পরবর্তীতে পুরো রহস্যটা ভাল ভাবে বুঝতে সেই কর্মচারীর সঙ্গে সস্ত্রীক বারাণসীতে রওনা হলেন ভগবতীবাবু। গিয়ে দেখেন, চৌকিতে পদ্মাসনে বসা সেই লোক। আবার শ্যামচরণ মৃদু ভৎসনা করলেন ভগবতী বাবুকে সে দিনই সস্ত্রীক লাহিড়ীমশাইয়ের কাছে দীক্ষা নিলেন।ভক্তের মনোস্কামনা পূর্ণ করতে এই ভাবে লাহিড়ী মশাই সুক্ষ দেহে আবির্ভূত হতেন।
শোনা যায় একবার তাঁরই এক শিষ্যা অভয়া গুরুর সঙ্গে দেখা করতে হাওড়া থেকে বারাণসী আসছেন। মালপত্র নিয়ে ছুটতে ছুটতে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতেই দেখলেন, বারাণসী এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে স্টেশনেই বসে পড়লেন তিনি। আস্তে আস্তে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ট্রেন। চূড়ান্ত হতাশ অভয়া তখন অঝোরে কাঁদছেন আর গুরুদেব শ্যামাচরণ লাহিড়িকে স্মরণ করছেন।হটাৎ অভয়া দেখলেন, ট্রেন থেমে গিয়েছে।ড্রাইভার ও গার্ড ও অবাক তৎক্ষণাৎ মালপত্র নিয়ে দৌড় দিলেন তিনিও। অভয়া ট্রেনে ওঠামাত্র থেমে যাওয়া বারাণসী এক্সপ্রেস আবার গড়গড় করে চলতে শুরু করল।বারাণসী পৌঁছে অভয়া তাঁর গুরুদেবের কাছে গেলেন। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা মাত্র যোগীরাজ শ্যামাচরণ বললেন, ‘ট্রেন ধরতে গেলে একটু সময় হাতে নিয়ে বেরোতে হয় মা,অত বড়ো ট্রেনকে কি আটকে রাখা যায়?গুরুর অলৌকিক ক্ষমতায় এবং স্নেহ দেখে অবাক হলেন শিষ্যা অভয়া|
দেশ কাল সীমানার গণ্ডী শ্যামাচরণ অতিক্রম করে ছিলেন তার যোগ বলে এবং স্থূল দেহ ছেড়ে তিনি সুক্ষ দেহে বিচরণ করতে পারতেন অবলীলায় এবং তার সব শিষ্যদের কাছে তিনি পৌঁছে যেতেন তাদের প্রয়োজনে।
ভক্তের ভগবানের পরবর্তী পর্ব নিয়ে আবার যথা সময়ে ফিরে আসবো।থাকবে এমনই সব অলৌকিক ঘটনা।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।