ভক্তের ভগবান – কালী ভক্ত রামানন্দ গোস্বামী
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
সোমবতী বকুল অমাবস্যা বা পৌষ অমাবস্যার পুন্য তিথিতে আজ প্রসিদ্ধ তন্ত্র সাধক এবং কালী ভক্ত রামানন্দ গোস্বামীর কথা জানাবো।
আজ থেকে প্রায় সাতশো বছর আগে তন্ত্র মতে কালী পূজা শুরু করেন রামানন্দ গোস্বামী।
তাঁর সাধনার স্থান ছিল কাশ আর বেতবনে ঘেরা শ্মশান।তিনি ছোটবেলা থেকে কালী মায়ের একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন । যদিও রামানন্দ গোস্বামীর পিতা কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার জন্য পুত্রের কালী-মা ভক্তি মোটেই পছন্দ করতেন না ।দীর্ঘ সময় কঠোর সাধনা করে মায়ের দর্শন পেয়ে ছিলেন রামানন্দ গোস্বামী । মায়ের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন ঠাকুর রামানন্দ।সেই শ্মশানের মধ্যে পঞ্চমুন্ডীর আসন প্রতিষ্ঠা করে মায়ের মন্দির তৈরী করেছিলেন তিনি। সেই পুজো আজ বিখ্যাত এই কালী পুজোর রূপ নিয়েছে।
তার শৈশবের সময় থেকেই বহু অলৌকিক ঘটনার কথা শোনা যায়। একবার সাধক রামানন্দ যখন সেই শ্মশানে ধ্যানে মগ্ন তখন পাড়ার কেউ তাঁর বাবাকে এই খবর দিয়েছেন । তাঁর কৃষ্ণভক্ত বাবা সাথে সাথে শ্মশানে আসেন কিন্তু শুধু কৃষ্ণ ছাড়া তিনি আর কিছুই দেখতে পাননি । ভক্তকে রক্ষা করতে স্বয়ং মা কালী কৃষ্ণ রূপে দেখা দিয়ে ছিলেন বলে মনে করা হয়।
আজও রামানন্দ গোস্বামীর পুজোয় একটি
শাঁখারী পরিবারের বংশধরেরা নিয়মিত শাঁখা দিয়ে যায়। তারও একটি বিশেষ কারন আছে।শোনা যায় একদিন এক শাঁখারী মায়ের পুকুর পাড় দিয়ে যাচ্ছেন । এমন সময় একটি বাচ্চা মেয়ে তাঁর কাছে শাঁখা পরতে চায় । শাঁখারী দু-হাতে শাঁখা পরিয়ে টাকা চায় । মেয়েটি তখন উত্তরে জানায়,’ মন্দিরের কুলুঙ্গিতে বেলপাতা ঢাকা দু-টাকা রাখা আছে বাবাকে দিতে বলবি ‘ শাঁখারী তাঁর কথা মতো পুরোহিতের কাছে সমস্ত কথা বলেন । পুরোহিত অবাক হয় এবং পরে সেখানে দুটি টাকা পাওয়া যায়। তিনি দু-টাকা সেখান থেকে নিয়ে শাঁখারীকে দিয়ে বলেন যে তার তো কোনো মেয়ে নেই । দুজনে সেই স্থানে ফিরে গেলেও মেয়েটিকে আর দেখতে পাওয়া যায়নি । তখন ঠাকুর বুঝতে পেরে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়েই মাকে শাঁখা দেখানোর অনুরোধ করেন । সন্তানের অনুরোধে মা কালী স্বয়ং পুকুরের মাঝে তার হাত তুলে শাঁখা দেখায় ।
কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এখানে রাত্রে মায়ের প্রতিমা তৈরীর কাজ নিষিদ্ধ ।কথিত আছে
বহু বছর আগে একবার এক প্রতিমাশিল্পী রাত্রে মায়ের চক্ষুদান করছেন । ওই সময় এক অদৃশ্য হাত শক্তি তাকে মন্দিরে বাইরে বের করে দিয়েছিলো। পরের দিন সকালে তাকে আহত অবস্থায় মন্দিরের বাইরে উদ্ধার করা হয় ।
অন্যদিকে মায়ের মুর্তিতে ছিন্নভিন্ন রক্তের দাগ দেখতে পায় । তখন থেকে আজও মায়ের প্রতিমা দিনেই তৈরী করা হয়। স্বশরীরে উপস্থিত না থাকলেও আজও মহান কালী ভক্ত রামানন্দ গোস্বামীর পুজোয় তার অদৃশ্য উপস্থিতি লক্ষ করা যায় বলেই স্থানীয়রা মনে করেন।
আবার এক মহান ভক্ত এবং তার সাধনার কথা নিয়ে ফিরে আসবো ভক্তের ভগবান সংক্রান্ত আলোচনায়। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।