কালী কথা – বর্ধমানের ক্ষ্যাপা কালীর পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
বর্ধমানের অন্যতম প্রসিদ্ধ এবং জাগ্রত দেবী হলেন
ক্ষ্যাপা কালী।আজকের কালী কথায় জানাবো
এই দেবীর মাহাত্ম এবং এই কালী পুজোর ইতিহাস।
আজও এই এই অঞ্চলে এই পুজোকে কেন্দ্র করে একটি অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।
এই এলাকায় অন্যতম প্রতিষ্ঠিত এবং প্রভাবশালী পরিবার ছিলো ভট্টাচার্য পরিবার। এই ভট্টাচার্য বাড়ির প্রবীণ সদস্য নিমাই ভট্টাচার্য একদিন নিজেদের পৈত্রিক পুকুর থেকে স্নান করে বাড়ি ফিরছিলেন ।পথে হঠাৎ দেখতে পেলেন তার পিছনে পিছনে একটা এলোচুলের কালো কিশোরী মেয়ে আসছে।মেয়ের রূপ দেখে প্রথমে তিনি ভাবলেন কোনো সাঁওতাল মেয়ে হবে।কিন্তু যে মুহূর্তে বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়েছেন হঠাৎ শুনতে পেলেন – “আমাকে নিয়ে যাবিনা ?” চমকে ওঠেন নিমাই বাবু পিছনে তাকিয়ে সেই কিশোরী মেয়েটিকে আর দেখতে পাননি।সেই মেয়ে
অদৃশ্য হয়েছে।
সেই রাতেই ধার্মিক নিমাই ভট্টাচার্য স্বপ্নে মা কালী কে দেখেন এবং মা কালী তাকে তার পুজো শুরু করার নির্দেশ দেন।মা’কালীর নির্দেশে শুরু হয় কালী পুজো।সেই পুজোই আজ ক্ষ্যাপা কালীর পুজো নামে সমগ্র বর্ধমানে প্রসিদ্ধ।
সেই এলোচুলের মেয়েটিকে ক্ষেপির মত দেখতে লাগছিল তাই মায়ের নাম রাখা হয় ক্ষ্যাপাকালী। যেহেতু তার গায়ের রঙ ছিল কালো তাই মায়ের গায়ের রঙ করা হয় কালো ।স্বপ্নে পাওয়া মায়ের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটি জায়গা থেকে গভীর রাতে মায়ের ঘট আনা হয় । আজও সেই রীতি চলে আসছে।
প্রথম দিকে তালপাতার ছাউনি দেওয়া ঘরে মায়ের পুজো হতো।পরবর্তীতে মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে গ্রামের এক বাসিন্দা নিদিষ্ট একটি জায়গা দান করেন। পরবর্তীতে সেখানেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী মন্দির। প্রতিষ্ঠিত হয় পঞ্চমুণ্ডীর আসন। যা আজও আছে।
প্রতিটি বিশেষ অমাবস্যা তিথিতে বিশেষ পুজোর আয়োজন হয় এবং বহু ভক্ত সমাগম হয়।
ভক্তরা বলেন এখনো মায়ের ভোগের থালায় দেখা যায় হাতের দাগ দেখলে মনে হবে কেউ যেন সেখান থেকে খাবার তুলে খেয়েছে। মনে করা হয় সবার অলক্ষ্যে স্বয়ং ‘মা’ এসে ভোগ খেয়ে গেছেন।
এই অঞ্চলের যেকোনো শুভ কাজে ক্ষ্যাপা পায়ের আশীর্বাদ নেয়ার রীতি আছে।শুভ কাজে
যাওয়ার অনেকেই ক্ষ্যাপা কালীর পূজায় ব্যাবহিত
ফুল নিজের সঙ্গে রাখেন।
আসন্ন দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে বাংলার এমন সব প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে চলতে থাকবে কালী কথা।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।