পুরান এবং নবগ্রহ – বুধ

30

পুরান এবং নবগ্রহ – বুধ

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

শাস্ত্রে তিন রকমের দেবতার উল্লেখ আছে। বৈদিক দেবতা, পৌরাণিক দেবতা এবং লৌকিক দেবতা। নব গ্রহের প্রত্যেক দেবতা হয়ে বৈদিক অর্থাৎ বেদে তাদের উল্লেখ আছে আবার পুরানেও তাদের পাওয়া যায়। আজ আলোচনা করবো নব গ্রহের অন্যতম বুধ গ্রহকে নিয়ে।

 

পুরান অনুসারে বুধ চন্দ্র দেব এবং দেব গুরু বৃহস্পতির স্ত্রী দেবী তারার অবৈধ সন্তান|বুদ্ধের জন্ম নিয়ে আছে এক বিতর্কিত পৌরাণিক কাহিনী|সেই কাহিনী সংখ্যে কিছুটা নিম্নরূপ –

 

দেবগুরু বৃহস্পতির বহু শিষ্য ছিল এবং চন্দ্রও ছিলেন ওনার এক শিষ্য,সৌন্দর্যের অপর নাম ছিলো চন্দ্র |অন্যদিকে বৃহস্পতির স্ত্রী তারা ছিলেন পরম সৌন্দর্যের অধিকারিণী|তারা দেবী ও চন্দ্র পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন ও এক প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠ|পরবর্তীতে বৃহস্পতি সব জানতে পারলে চন্দ্রের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাঁধে এই যুদ্ধে দৈত গুরু শুক্র বা শুক্রাচার্য চন্দ্রের পক্ষ নেন|অন্যদিকে দেবতারা তাদের গুরু বৃহস্পতির পক্ষ নেন|অবশেষে এই যুদ্ধ থেকে ব্রম্হান্ডকে রক্ষা করতে ব্রহ্মদেব মদ্ধস্ততা করেন ও যুদ্ধ থামে|ইতিমধ্যে চন্দ্রের ঔরসে তারার গর্ভে জন্মনেন এক পুত্র|চন্দ্র তার নাম রাখেন বুধ|পরবর্তীকালে চন্দ্রদেব বুধের দায়িত্ব সঁপে দেন ওনার প্রিয় পত্নী রোহিণীকে। তাই বুধদেবকে রৌহিণেয়ও বলা হয়| আবার চন্দ্র বা সোমদেবের পুত্র হওয়ায় বুধের অপর নাম সৌম|

 

পুরানে পাওয়া বর্ননা অনুসারে দেবতা বুধের শরীর কিয়দ পিঙ্গল বর্ণের কিংবা সবুজাভ,তিনি পিঙ্গল পোশাক পরিহিত। আগুন ও বাতাসের তৈরি তার রথ|এই রথ টেনে নিয়ে যায় আটটি বাতাসের তৈরি ঘোড়া|কিছু গ্রন্থে বুধ কে বুদ্ধিদাতা ও গন্ধর্বদের প্রণেতাও মানা হয়|শ্রীবুধের বাহন সিংহ|তিনি বুধ গ্রহের অধিপতি|

 

বাংলায় আমাদের বুধবার এসেছে বুধ দেবতার নাম অনুসারে। বুধ শব্দের অর্থ পন্ডিত, বিদ্বান বা জ্ঞানী|বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে বুধ একটি অন্যতম শক্তিশালী এবং শুভ গ্রহ যা মূলত বুদ্ধি এবং অর্থের কারক গ্রহ হিসেবে স্বীকৃত|জ্যোতিষ শাস্ত্রে বুধ গ্রহটিকে বালকের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে এবং কুমার গ্রহ বলে ধরা হয়েথাকে কারন বুধের মধ্যে রয়েছে বালক সুলভ চপলতা , কর্মে চঞ্চলতা|

 

বুধের শুভ প্রভাবে জাতক জাতিকার জ্ঞান বিজ্ঞান , কাব্য , সাহিত্য চর্চা, জ্যোতিষ বিদ্যা , চিকিৎসা বিদ্যা , আইন জীব , গণিত ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি সম্ভব আবার বুধ  অশুভ হলে অস্থিরতা , মূর্খতা , উদাসীনতা ,বাচালতা খারাপ কোনো বাবস্যার সাথে যুক্ত হওয়া  ইত্যাদি প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়|এছাড়া বুধ একাধিক শুভ যোগের মুল কারক গ্রহ যার মধ্যে রয়েছে বুধাদিত্য যোগ|বুধ কন্যা ও মিথুন রাশির স্বামী বা অধিপতি|বুধের প্রধান রত্ন হিসেবে পান্নাকে নির্ধারিত করা হয়েছে|

 

নবগ্রহ সংক্রান্ত আলোচনা ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে। ফিরে আসবো পরবর্তী গ্রহ নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।