শিব মাহাত্ম – জল্পেশ শিব

30

শিব মাহাত্ম – জল্পেশ শিব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শিব মাহাত্মর এই পর্বে উত্তর বঙ্গের বিখ্যাত এক শিব তীর্থর কথা উল্লেখ করবো|আজকের পর্ব বিখ্যাত জল্পেশ শিব মন্দির নিয়ে ।এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু কিংবদন্তী এবং অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ আছে।

 

পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র হল জল্পেশ মন্দির।এই মন্দিরের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে।কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণের বাবা বিশ্ব সিংহ ১৫২৪ সালে প্রথম এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।১৫৬৩ সালে মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ১৬৬৩ সালে রাজা প্রাণ নারায়ণও একবার মন্দিরটি নতুন করে গড়ে তোলেন বা সংস্কার করেন।

 

জল্পেশ মন্দির প্রসঙ্গে একাধিক তত্ত্বর অস্তিত্ব রয়েছে|কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন|জল্পেশ নামে কোনো এক প্রতাপশালী রাজবংশী ক্ষত্রিয় রাজা অথবা সর্দার এই অঞ্চলে এককালে শাসন করতেন । তাঁর নাম অনুসারে মন্দিরের নাম হয়েছে জল্পেশ।অনেকে মনে করেন হয়ত তিনি কোনো দৈব শক্তির অধিকারী ছিলেন। তাই হয়তো

তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁকে দেবতার স্থানে উন্নীত

করা হয়েছে।

 

আবার অনেকে ভাবেন জল্পেশ হয়ত কোনো শক্তিশালী গ্রামদেবতা বা লৌকিক দেবতা ছিলেন পরে কোচবিহারের রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় শিবের সঙ্গে একীভূত হন এবং তিনিই উত্তরবঙ্গের প্রধান দেবতা রূপে স্বীকৃত হয়েছেন।

এবং পরবর্তীতে জল্পেশ থেকেই জলপাইগুড়ি

নাম করণ হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।

 

তবে শাস্ত্র অন্য কথা বলে। উত্তর বঙ্গের অন্যতম প্রসিদ্ধ শক্তি পীঠ হলো ভ্রামরী দেবীর মন্দির এবং ভ্রামরী শক্তিপিঠের ভৈরব হলেন জল্পেশ। শিব এখানে একটি গর্তের মধ্যে রয়েছেন তাই তিনি অনাদি নামেও পরিচিত।তার আদি এবং অন্ত খুঁজে পাওয়া যায়না। তিনি শয়ম্ভু।

 

বেশ কিছু কাল আগে জল্পেশ মন্দির সংলগ্ন এক স্থানে খনন করার সময় আরো একটি শয়ম্ভু অনাদি শিব লিঙ্গ উদ্ধার করা হয় যা নিয়ে সেই সময় বেশ আলোচনা হয়।

 

সব মিলিয়ে জল্পেশ শিব মন্দির গোটা বাংলার মানুষের কাছেই অত্যন্ত প্রসিদ্ধ এবং জাগ্রত একটি শৈব্য তীর্থ।বাবা জল্পেশ্বর এর দর্শন পেতে বহু মানুষ এই স্থানে আসেন |বিশেষ করে শ্রাবন ও চৈত্র মাসে দর্শণার্থী দের ভিড় বেশি হয়। শিব রাত্রি এবং নীল ষষ্ঠীতে বিশেষ পুজো হয় এবং মেলা বসে। এই সময়ে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন শিব ভক্তরা। শোনা যায় বাবা জল্পেশ পরম

দয়ালু তিনি ভক্তদের সব মনোস্কামনা পূর্ণ করেন।

 

শিব মাহাত্ম নিয়ে আবার পরবর্তী পর্বে

ফিরে আসবো।থাকবে এমনই তথ্য সমৃদ্ধ আলোচন। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।