শিব মাহাত্ম – কেশবেশ্বর শিব

34

শিব মাহাত্ম – কেশবেশ্বর শিব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

এর আগে আপনাদের উত্তর বঙ্গের বিখ্যাত কয়েকটি শিব মন্দিরের কথা বলেছি আজ আপনাদের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কেশবেশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস জানাবো।এই মন্দির নিয়ে প্রচলিত আছে বহু মিথ বা কিংবদন্তী।

 

বিখ্যাত সাবর্ণ রায় চৌধুরী বংশের অন্যতম সদস্য ছিলেন জমিদার কেশবরাম রায় যিনি ছিলেন তৎকালীন বঙ্গ সমাজের অন্যতম গুণী ও সন্মানীয় ব্যাক্তি এবং একনিষ্ট শিব ভক্ত। দীর্ঘদিন নিঃসন্তান থাকার পর কেশবরাম রায় বিশ্বনাথের কাছে সন্তান প্রার্থনা করেন এবং পরবর্তীতে বিশ্বনাথ কে স্বপ্নে দেখেন। এই ঘটনার কিছুকাল পরেই কেশব রাম এক পুত্র সন্তান লাভ করেছিলেনএবং তিনি তার নাম রাখেন শিবদেব পরবর্তীতে যিনি সন্তোষ রায় চৌধুরী নামে পরিচিত। কেশবরাম রায় মোঘল আমলে ঔরঙ্গজেবের কাছ থেকে স্বতন্ত্র ‘রায় চৌধুরী’ খেতাব পেয়েছিলেন সেই থেকে তারা রায় চৌধুরী পদবি ব্যাবহার করছেন।

 

ব্রিটিশ আমলে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গের সমাজপতি কেশবরাম দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারে যে শিবমন্দির এবং শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে যান তার কেশবরামের নামানুসারে নাম হয় কেশবেশ্বর।

 

মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছেন মহাদেব। লোকমুখে শোনা যায় যে কাশী থেকে আনা হয়েছিল এই শিবলিঙ্গ। শিবমন্দির প্রায় ৬০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি আটচালা মন্দির। মন্দিরের ২১টি সিঁড়ির মধ্যে ১৬টি ধাপের সিঁড়ির বেশি ভাগই ইতিমধ্যেই মাটির তলায় লীন হয়েছে। সামান্য কয়টি সিঁড়ি দেখা যায়।বিশাল নন্দী মূর্তিও রয়েছে এখানে।

 

শোনা যায় এক কালে দুররোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বহু মানুষ এই মন্দিরে আসতেন এবং আরোগ্য প্রার্থনা করতেন যাদের উপর বাবা কেশবেশ্বর কৃপা করতেন তারা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন।

জনশ্রুতি আছে এই মন্দিরের নন্দী মূর্তি গভীর রাতে জীবন্ত হয়ে মন্দির চত্বরে বিচরণ করতো।

 

প্রায় সারা বছরই এই মন্দিরে জন সমাগম হয় তবে শ্রাবন মাসে এবং বিশেষ করে শিব রাত্রিতে এছাড়া চৈত্র মাসেরশেষে নীল ষষ্ঠীর সময়ে বিশেষ

পূজা হয় ।সেই সময়ে বিশাল সংখ্যক ভক্ত সমাগম ঘটে এই মন্দির চত্বরে।বহু মানুষ আসেন নিজের মনোস্কামনা নিয়ে। শোনা যায় বাবা কেশবেশ্বর তার ভক্তদের খালি হাতে ফেরান না।বহু মানুষের জীবনের দুঃখ কষ্ট বাবা কেশবেশ্বর দুর করেছেন বলে শিব ভক্তদের বিশ্বাস।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে আবার এক প্রাচীন শিব মন্দিরের কথা নিয়ে।শিব মাহাত্ম নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা

চলতে থাকবে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।