কালী কথা – দেবী জহুরার মাহাত্ম

42

কালী কথা – দেবী জহুরার মাহাত্ম

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

দেবী জহুরা বা জহুরা কালী মন্দির মালদা তথা বাংলার অন্যতম প্রসিদ্ধ কালী মন্দির।
আজকের পর্বে জানবো এই দেবী
জহুরার মাহাত্ম।

কিছু ইতিহাস বিদ মনে করেন এই দেবীর পুজোর সূচনা হয়েছিলো সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের আমলে আবার মন্দিরের গায়ে যে পাথরের ফলক আছে তা থেকে অনুমান করা যায়,আজ থেকে তিনশো বছর আগে উত্তরপ্রদেশের কোনো এক মাতৃ সাধক স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে দেবী জহরা চণ্ডীর বেদি স্থাপন করেছিলেন|

মালদার জহুরা এই প্রাচীন এবং জাগ্রত এই কালী মন্দিরকে কেন্দ্র করে অনেক রহস্যময় ও অলৌকিক ঘটনা প্রচলিত আছে।কেনো কালী মন্দিরের নাম জহুরা কালী মন্দির তার পেছনেও এক রোমাঞ্চকর গল্প আছে।

ইংরেজবাজার থানা এলাকায় একটি প্রাচীন আমবাগানের মধ্যে রয়েছে এই প্রাচীন জহুরা কালীমন্দির।শোনো যায় এক কালে এই অঞ্চলে ছিলো ঘন অরণ্য|ডাকাতরাই একপ্রকার শাসন করতো এই এলাকা এবং এই দেবী এক সময়ে ছিলেন ডাকাতদের আরাধ্যা। এখানে দেবী চণ্ডীর পুজো করে ডাকাতরা যেত ডাকাতি করতে। ডাকাতি করে প্রচুর ধনরত্ন আনত তারা, তারপর সেগুলোকে এখানেই মাটির তলায় রাখত। সেই ধনরত্নের ওপরই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় যেহেতু ধনরত্নকে হিন্দিতে বলে ‘জওহর’ বা জহরত তাই দেবীমূর্তির নিচে প্রচুর ধনরত্ন রাখা থাকত বলেই এখানে দেবী চণ্ডী ‘জহরা’ বা ‘জহুরা’ নামে বিখ্যাত|

শোনা যায় বহুকাল আগে এখানে দেবীর পূর্ণ অবয়ব মূর্তি ছিলো তবে বিদেশী শত্রুর আক্রমণের ভয়ে তা মাটির নিচে লুকিয়ে ফেলেন পুরোহিতরা|
বর্তমানে মন্দিরের অভ্যন্তরে লাল রঙের ঢিবির ওপর রয়েছে এক মুখোশ এবং ঢিবির দু’পাশে আরও দু’টি মুখোশ দেখা যায়। এছাড়া গর্ভগৃহে আছে শিব আর গণেশের মূর্তি|এখানে বৈশাখ মাসের মঙ্গল ও শনিবার থাকে বিশেষ পুজোর আয়োজন|উল্লেখযোগ্য বিষয় অন্যান্য কালীমন্দিরের মতো এখানে রাত্রিবেলা কোনো পুজো হয় না পুজো হয় দিনে|

দেবী জহুরা চন্ডিরই রূপ তিনি অত্যন্ত জাগ্রত ও প্রসিদ্ধ তার পুজো উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হন এই মন্দির প্রাঙ্গনে|প্রতিটি অমাবস্যা তিথিতে জহুরা কালী মন্দিরে তন্ত্র মতে পুজো হয় এবং বহু দর্শণার্থী আসেন সেই পুজো দেখতে।

আবার কালী কথার পরের পর্বে ফিরে আসবো নতুন কোনো কালী মন্দিরের রোমাঞ্চকর ইতিহাস নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।