নবগ্রহ – সূর্যদেব

1455

জীবনের দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় কাটিয়ে দিলাম গ্রহ নক্ষত্র দের নিয়ে, শাস্ত্র নিয়ে আর অবশ্যই জ্যোতিষ চর্চা নিয়ে|অগণিত জাতক জাতিকার জন্মছক বিশ্লেষণ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করেছি |তাদের জীবনে সাফল্য আসতে দেখেছি|বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্র মূলত মানুষের জীবনে গ্রহ নক্ষত্রর প্রভাব নির্নয় করে এবং সে ক্ষেত্রে প্রতিটি গ্রহর একটি দৈব সত্ত্বা রয়েছে, রয়েছে তাদের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য|নব গ্রহনিয়ে এই লেখালেখি শুরু করেছিলাম গ্রহরাজ শনি কে দিয়ে, আজ দ্বিতীয় পর্বে লিখবো নবগ্রহের প্রথম গ্রহ সূর্যদেব বা রবি কে নিয়ে|জানবো জ্যোতিষ শাস্ত্রে তার ভূমিকা এবং পুরান ও অন্যান্য শাস্ত্রে সূর্যদেব সম্পর্কে কি লিপিবদ্ধ আছে|

সূর্যদেব মূলত বৈদিক দেবতা, বৈদিক যুগে ইনি প্রধান দেবতারূপে পূজিত হতেন ইনি কশ‍্যপ মুনির এবং অদিতি দেবীর পুত্র|সূর্যের অপর নাম হল আদিত‍্য|শাস্ত্র মতে শ্রীসূর্য দেব জগতের সকল শক্তির উৎস এবং তিনি অন্ধকারকে নাশ করেন|সূর্য দেবের চারটি হাত । তিনি শঙ্খ, চক্র , ধনুক ও বাণ ধারনকারী |সূর্যদেব সাতটি ঘোড়া যুক্ত রথে চড়ে ব্রহ্মান্ডে ভ্রমণ করেন| তার সারথির নাম অরুণ দেব |সূর্য দেবের সাতটি ঘোড়া সাতটি কিরণকে নির্দেশ করে| কথিত আছে , তার রথ কখনো থামে না |সৌরজগতের রাজা বা অধিপতি হলেন সূর্যদেব|সূর্যদেবের দুই জন স্ত্রী ছায়া ও সংজ্ঞা মতান্তরে , সংজ্ঞা ও সন্ধ‍্যা|জম,শনি, যমুনা সূর্যের সন্তানদের অন্যতম|অস্বীনি কুমার এবং সুগ্রীব ও সূর্যদেবেরই সন্তান|সূর্যদেব থেকেই সূর্য বংশের সৃষ্টি|

কথিত আছে- সূর্যপত্নী সংজ্ঞা সূর্যের তাপ সহ্য করতে অসমর্থ হলে, সংজ্ঞার পিতা বিশ্বকর্মা সূর্যকে মোট ১২টি ভাগে ভাগ করেন এবং এই আটটি ভাগ পৃথিবীতে পতিত হলে বিশ্বকর্মা এগুলি থেকে শক্তি সঞ্চয় করে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরের অস্ত্র, কার্তিকেয়ের তরবারি ও অন্যান্য দেবতাদের অস্ত্র নির্মাণ করে দেন|

বিভিন্ন পুরানে ও ধর্মগ্রন্থে সূর্যদেবকে নিয়ে রয়েছে অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ, যার সব গুলি এতো অল্প পরিসরে তুলে ধরা অসম্ভব তবে কয়েকটি ঘটনার কথা বলবো-

অমৃত পানকালে প্রতারক দানব রাহুকে চিহ্নিত করেন সূর্যদেব ও চন্দ্রদেব এবং এইজন্য তাঁরা রাহুর চিরশত্রুতে পরিণত হন ও প্রতিশোধ স্বরূপ রাহু সাময়িকভাবে সূর্য ও চন্দ্রকে গ্রাস করেন| এ ক্ষেত্রে কোনো দেবগণ সূর্যদেবকে সাহায‍্য না করায় সূর্যদেব ক্রোধিত হলেন এবং এর ফলে তিনি অসীম তেজবৃদ্ধি করলেন|সূর্যের তেজের ফলে সৃষ্টি ধ্বংস হবার উপক্রম হলে ব্রহ্মাদেব অরুণ দেবকে সূর্যের সারথি করলেন এবং তাকে শান্ত হতে অনুরোধ করলেন|অবশেষে তিনি শান্ত হলেন ও রক্ষা পেলো ব্রম্হান্ড|অর্থাৎ সূর্যের তেজ যেমন সৃষ্টির উৎস তেমনই অতিরিক্ত তেজ সৃষ্টির ধ্বংসের কারনও হতে পারে|

একবার রাবণ দিগ্বিজয়ে বের হয়ে, সুমেরু শিখরে রাত্রি যাপন করেন এবং পরদিন পুষ্পক রথে চড়ে সূর্যলোকে যান। সেখানে সূর্যের তেজে কাতর হয়ে তিনি প্রহস্ত নামক এক অনুচরকে দিয়ে সূর্যের সাথে যুদ্ধ করার প্রস্তাব পাঠান। সূর্য তার দণ্ডী নামক এক অনুচরকে দিয়ে বার্তা পাঠান ‘তুমি রাবণের নিকট যাও এবং তাকে হয় পরাজিত কর, না হয় বলো পরাজিত হলাম।’ দণ্ডী এই কথা সূর্যকে জানালে, রাবণ নিজেকে জয়ী ভেবে ফিরে যান|

মহাভারতে উল্লেখ আছে- কুন্তী দেবী দুর্বাসার কাছ থেকে বর পেয়ে সূর্যকে আবাহন করলে, সূর্য কুন্তীর সাথে মিলিত হন। এই মিলনের ফলে কর্ণ নামক মহাবীরের জন্ম হয়|

বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে সূর্য সবথেকে প্রভাব শালী ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রহগুলির অন্যতম|সূর্য একা ধারে পিতৃ কারক গ্রহ এবং কর্ম, প্রভাব, প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠাকে নির্দেশ করে|সূর্য ভালো থাকলে জাতক জাতিকার নাম, যশ ও অর্থাৎ লাভের পথ প্রশস্ত হয়ে|সূর্যের অশুভ প্রভাব বা অবস্থান জাতক জাতিকার জীবনে সাফল্য অর্জনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়| পিতার স্বাস্থ বা আর্থিক অবস্থাও নির্ভর করে সূর্যের অবস্থানের উপর|জ্যোতিষ শাস্ত্রে চন্দ্র যেমন মন মানসিকতা কে প্রভাবিত করে সূর্য তেমন দেহ ও ব্যক্তিত্ব কে প্রভাবিত করে|আবার কোনো গ্রহ যদি সূর্যের অতিরিক্ত কাছে এসে পরে তা সূর্যের তেজে শক্তিহীন হয়ে পরে তখন তাকে আমরা দগ্ধ গ্রহ বলি|

তবে একজন জাতক বা জাতিকার জীবনে সূর্যের প্রভাব ঠিক কি হবে তা সঠিক ভাবে বলতে গেলে একটি জন্মছককে খুঁটিয়ে দেখে, বিশ্লেষণ করে তারপর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ এবং তা পারেন কোনো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জ্ঞানী জ্যোতিষী|
সঠিক ভাগ্যবিচার ও প্রয়োজন হলে প্রতিকার এটাই জ্যোতিষ শাস্ত্রের মুল কথা|যদি জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাস থাকে, যদি সঠিক জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকারের মাধ্যমে জীবনের বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চান|নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|আপনাদের পন্ডিতজি আপনাদের পাশে থাকবে। ভালো থাকবেন । ধন্যবাদ।