গ্রহরাজ

696

আগেই কথা দেয়া ছিলো যে এক নতুন ধারাবাহিক লেখনী নিয়ে দ্রুত আপনাদের সামনে হাজির হবো|এই বিশেষ পর্ব গুলিতে আলোচনা করবো নবগ্রহ নিয়ে|একেকটা পর্বে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবো নবগ্রহের একেকটা কে নিয়ে|জানবো তাদের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা, তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা নানান পৌরাণিক ঘটনা ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে তাদের ভূমিকা|আজ প্রথম পর্ব|শুরু করবো গ্রহরাজ শনিদেবকে দিয়ে|

হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে শনিদেব সূর্যদেব ও সূর্যপত্নী ছায়ার নয় পুত্রের অন্যতম|শনিকে ছায়া পুত্রও বলা হয়ে থাকে|তার গাত্রবর্ণ ঘোর কৃষ্ণবর্নের|তিনি স্বভাবে উগ্র ও বদমেজাজি|সূর্যদেব যখন তার রাজত্ব অর্থাৎ একেকটা লোক একেক জন পুত্রকে বিতরন করলেন স্বভাবতই অখুশি হলেন শনিদেব|পরবর্তীতে ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে নিজের ভাইদের রাজ্য ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করলেন|পিতা সূর্যদেব এই অন্যায় দেখে ও নিজ পুত্রদের শনির হাত থেকে রক্ষা করতে তার আরাধ্য মহাদেবের স্মরণ নিলেন|শিব প্রথমে নন্দী ও বীরভদ্র কে পাঠালেন শনিকে উচিৎ শিক্ষা দিতে
কিন্তু তারা শনিদেবের কাছে পরাজিত হলেন|
এর পর শিব স্বয়ং শনিদেবের মুখোমুখি হলেন এবং তার ত্রিশূলের আঘাতে মূর্ছিত হলেন শনিদেব|পরবর্তীতে সূর্যদেবের অনুরোধে আবার শিব সুস্থ করে দিলেন শনিকে|এবার নিজের ঔদ্ধত্য ও অহংকার ভুলে শনিদেব আত্ম সমর্পন করলেন মহাদেবের চরনে|শিব তাকে ক্ষমা করলেন এবং আশীর্বাদ করলেন তার সাথে নিজের সেবক হিসাবে নিয়োগ কোরলেন শনি কে পাশাপাশি তাকে দিলেন দণ্ডাধীকারীর পদ|অর্থাৎ পাপ পুন্য বিচার করে ফল প্রদান করার অধিকার পেলেন শনি দেব|

শনির ক্ষমতাশালী বা কুখ্যাত দৃষ্টির পেছনেও আছে এক পৌরাণিক ঘটনা|ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে একদিন শনির ধ্যানের সময়, তার স্ত্রী দেবী ধামিনী সুন্দর বেশভূষা নিয়ে তার সামনে এলেন
কিন্তু ধ্যানমগ্ন শনিদেব সেদিকে খেয়াল না করাতে পত্নী ধামিনী বা মন্দা অপমানিত হলেন ও শনিদেবকে অভিশাপ দিলেন, বললেন আমার দিকে তুমি ফিরেও চাইলে না! এরপর থেকে যার দিকে চাইবে, সে-ই ভস্ম হয়ে যাবে!
মূলত সেই থেকেই শনির দৃষ্টিকে অশুভ হিসেবে ধরা হয়|

পুরান সহ আরো বহু শাস্ত্রে শনিদেবকে নিয়ে রয়েছে একাধিক তাৎপর্যপুর্ন ঘটনার উল্লেখ যার মধ্যে দুটি ঘটনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর|
এবার বীর বজরংবলী কে নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে লড়াইয়ে আহ্বান জানিয়েছিলেন শনিদেব|রাম নামে মগ্ন হনুমান তা প্রত্যাখ্যান করেন কিন্তু ক্রমাগত উত্যক্ত করায় নিজের লেজে জড়িয়ে শুনিদেবকে পাথরের উপরদিয়ে দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করেন হনুমান|পরাজিত ও আহত শনিদেব কোনো রকমে ক্ষমা চেয়ে নিস্তার পান|ক্ষতস্থানে তৈল মর্দন করে শান্তি পান|খুব সম্ভবত সেই থেকেই শনিদেবকে তেল নিবেদন করার রীতি চলে আসছে|

আরেকবার লংকাধিপতি রাবনের ক্রোধের কারন হন শনিদেব|ইন্দ্রজিৎ এর জন্মের সময় সব গ্রহ দের কার্যত বন্দী করে একটি নির্দিষ্ট রাশিতে থাকতে বাধ্য করেন রাবন|উদেশ্য এক অজেয় মহাশক্তিশালী পুত্র লাভ|কিন্তু চক্ৰান্ত করে বসেন শনিদেব|নিজের পা প্রসারিত করে অন্য রাশি স্পর্শ করেন|ভেস্তে যায় রাবনের পরিকল্পনা|ধরা পড়ে শাস্তি পান শনিদেব|

আমাদের বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে যে কয়টি অশুভ গ্রহর কথা বলা আছে শনি দেবকে তার মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয়|যদিও এর বিপক্ষে পাল্টা যুক্তিও আছে|যুগ যুগ ধরে শনিকেনিয়ে যে ভীতি বা আশঙ্কা মানুষের মনের গভীরে বাসা বেঁধেছে তা কিছুটা জ্যোতিষ শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা বা অজ্ঞতার কারনে হয়েছে বলে আমার ধারণা|শনি আসলে কর্ম ফলের কারকগ্রহ|সহজ কথায় ভালোর জন্য ভালো মন্দের জন্য মন্দ|জন্ম ছকে শুনি শুভ না অশুভ তা বলতে গেলে তার অবস্থান, নাক্ষত্রিক সংযোগ, গ্রহগত সংযোগ, দশা অন্তর দশা সহ আরো অনেক কিছুর বিস্তারিত ও চুল চেরা বিশ্লেষণ প্রয়োজন|শনির ঢাইয়া বা সাড়ে সাতি মানেই অশুভ এমনটা সবসময় নয়|শনির দশায় বা সাড়ে সাতি বা ঢাইয়া চলাকালিন জাতক জাতিকার জীবনের ব্যাপক উন্নতিও হতে পারে আবার উল্টোটাও হতে পারে|ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলবো না তবে আমি নিজের জীবনে এই সত্য উপলব্ধি করেছি একাধিক বার|

শনিকে অযথা ভয় পাবেন না, সঠিক জ্যোতিষ পরামর্শ ভাগ্যবিচারের মাধ্যমে আপনার জীবনে শনির প্রভাব কে আগে জানুন ভালো করে তারপর প্রয়োজন হলে উপযুক্ত প্রতিকারের মাধ্যমে প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে উঠুন|আমি আছি আপনাদের পাশে, আছেন মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা|ভয়ের কোনো কারন নেই|প্রয়জনে যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|আজ এই পর্ব এখানেই শেষ করছি|ফিরবো আগামী পর্বে|অন্য এক গ্রহকে নিয়ে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|